পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট ፃbrዒ श७३७ কনগ্রেস তো ভাঙিয়া গেল। - এবারকার কনগ্রেসে একটা উপদ্রব ঘটবে এ আশঙ্কা সকল পক্ষেরই মনে পূর্বে হইতেই জাগিয়াছে, কিন্তু ঠিকমত প্ৰতিকারের চেষ্টা কোনাে পক্ষই করেন নাই। দুই দলই কেবল নিজের বলবৃদ্ধি করিবার চেষ্টা করিয়াছেন, অর্থাৎ উপদ্রবের সংঘাতটা যাহাতে অত্যন্ত বাড়িয়া উঠে সেইরূপ আয়োজন হইয়াছিল । সমস্ত দেশকে লইয়া যে যজ্ঞের অনুষ্ঠান হয় সেই যজ্ঞের কর্তারা কে কোন বক্তৃতার বিষয় কেমন করিয়া বলিবেন বা লিখিবেন তাহাই ঠিক করিয়া খালাস পাইতে পারেন না । চারি দিকের অবস্থা বিচক্ষণতার সঙ্গে বিচার করিয়া তদনুসারে কাজের ব্যবস্থা করার ভার তঁহাদের উপর । কোনো কারণে কর্ম নষ্ট হইলে সেই কারণটাকে গালি দিয়া তাহারা নিস্কৃতি পাইতে পরিবেন না। বারুদের ভাণ্ডারে দেশলাই জ্বালাইতে দিলে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ইহাতে সন্দেহ নাই- এরূপ দুর্ঘটনা ঘটিলে হয় দেশলাই নাহয় বারুদকেই কর্তৃপক্ষেরা আসামির দলে দাড় করাইয়া থাকেন— জগতের সর্বত্রই তাহার প্রমাণ দেখা যায়। মণিপুরী হত্যাকাণ্ড যাহারা ঘটাইয়াছিলেন, মণিপুরীদের দণ্ড দিয়া তাহারা ধর্মবুদ্ধিকে তৃপ্ত করিয়াছেন, এবং আজ বাংলাদেশে যে বিচিত্র রকমের উৎপাত বাধিয়া উঠিয়াছে সেজন্য বাঙালিকেই বন্ধনপীড়ন সহ্য করিতে হইতেছে- ও দিকে কার্জন ও মলির জয়ধ্বনির বিরাম নাই । বস্তুত বারুদকে ও দেশলাইকে যাহারা সত্য বলিয়া জানে ও স্বীকার করে তাহারা এই দুটাের সংস্রবকে ঠেকাইবার জন্য সর্বপ্রকার উপায় উদভাবন করিয়া থাকে। দোষ যাহারই হউক বা রাগ যাহার পরেই থাক সে কথা লইয়া গরম না হইয়া হাতের কাজটা কী করিলে সিদ্ধ হয় এই ব্যবস্থা করিবার জন্যই তাহারা তৎপর হয় । এবারকার কনগ্রেসের র্যাহারা অধ্যক্ষ ছিলেন তাহারা অপ্রিয় বা বিরুদ্ধ সত্যকে স্বীকার করিবেন না বলিয়া ঘর হইতে পণ করিয়া আসিয়াছিলেন । স্বীকার করিলেই পাছে তাহাকে খাতির করা হয় এই তাহাদের আশঙ্কা । চরমপন্থী বলিয়া একটা দল যে কারণেই হউক দেশে জাগিয়া উঠিয়াছে। এ কথা লইয়া আক্ষেপ করিতে পারো, কিন্তু ইহাকে অস্বীকার করিতে পারো না । এই দলের ওজন কতটা তাহা বুঝিয়া তোমাকে চলিতেই হইবে। কিন্তু যখন স্বয়ং সভাপতি-মহাশয়ের মন্তব্যেও এই দলের প্রতি কটাক্ষপাত করা হইয়াছিল তখন স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে তিনি নিজের বিরক্তিপ্রকাশকেই কর্তব্যসিদ্ধি বলিয়া মনে করিয়াছেন- অবস্থা বিচার করিয়া মার বঁাচাইয়া কনগ্রেসের জাহাজকে কুলে পৌছাইয়া দেওয়া সম্বন্ধে র্তাহার চিন্তা ছিল না। ইহা যে ওকালতি নহে, বিরুদ্ধ পক্ষকে বক্তৃতার গদাঘাতে পাড়িয়া ফেলাই যে এই বৃহৎ কাজের পরিণাম নহে, দেশের সকল মতের লোককে একত্রে টানিয়া সকলেরই শক্তিকে দেশের মঙ্গলসাধনে নিয়োগ করিতে উৎসাহিত করাই যে ইহার সকলের চেয়ে বড়ো উদ্দেশ্য তাহা সাময়িক উত্তেজনায় তিনি মনে রাখেন নাই । তিনি এমন ভাবে কনগ্রেসের হালের কাছে দাড়াইয়াছিলেন যেন ঐ চরমপন্থীর দলটা জলের একটা ঢেউ মাত্র, উহা পাহাড় নহে, যেন কেবল বাকাবায়ুতে পাল উড়াইয়াই উহাকে ডিঙাইয়া যাওয়া চলিবে । আবার চরমপন্থীরাও এমনভাবে কোমর বঁাধিয়া কনগ্রেসের রণক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করিলেন যেন, যে মধ্যমপন্থীরা এতদিন ধরিয়া কনগ্রেসকে চালনা করিয়া আসিয়াছেন তাহারা এমন একটা বাধা যাহাকে ঠেলিয়া অভিভূত করিয়া চলিয়া যাইবেন— ইহাতে যাহা হয় তা হােক। এবং এটা এখনই করিতে হইবে- এইবারেই জয়ধ্বজা উড়াইয়া না গেলেই নয়। দেশের মধ্যে এবং কনগ্রেসের সভায় মধ্যমপন্থীর স্থানটা যে কী তাহা সম্পূর্ণভাবে এবং ধীরতার সহিত স্বীকার না করিবার জন্য মনের মধ্যে যেন প্ৰচণ্ড আগ্ৰহ । এই যে লুব্ধতা, এই যে অন্ধ নির্বন্ধ, ইহা যদি দলবতী সাধারণ লোকের মধ্যেই বদ্ধ থাকে তাহা