পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ brbr রবীন্দ্র-রচনাবলী হইলে সেটাকে মার্জনীয় বলিয়া গণ্য করা যায়- কিন্তু র্যাহারা দলের কর্তৃপদে আছেন তাহারাও যদি না বুঝেন কোনখানে রাশ টানিলে অগ্রসর হওয়া সহজ হয় এবং কোনখানে হার মানিলে তবেই যথার্থ জিতের সম্ভাবনা ঘটে, তবে ইহাই বলিতে হইবে- সংসারে র্যাহারা বড়ো জিনিসকে গড়িয়া'তুলিতে পারেন, যাহারা কার্যসিদ্ধির লক্ষ্যকে কোনোমতেই ভুলিতে পারেন না, ইহারা সে দলের লোক নহেন। ইহার কবির লড়াইয়ের দলের মতো উপস্থিত বাহবা ও দুয়োকে অত্যন্ত বড়ো করিয়া দেখেনদায়িত্বদৃষ্টিকে অবিচলিত স্থৈার্যের সহিত সুদূরে প্রসারিত করেন না। বিরুদ্ধ পক্ষের সত্তাকে যথেষ্ট সত্য বলিয়া স্বীকার না করিবার চেষ্টাতেই এবার কনগ্রেস ভাঙিয়াছে। এক গাড়ির এঞ্জিন যদি সামনের গাড়ির এঞ্জিনকে একেবারে নাই বলিতে চায়, এমন-কি, ঠেকাঠেকি হইলেও তখনো পরস্পরকে অস্বীকার করিয়া যদি সঁটীম চড়াইয়া দেওয়াকেই নিজের পথ খোলসার উপায় বলিয়া মনে করে তবে একটা চুরমার ব্যাপার না বাধিয়া থাকিতে পারে না। এ অবস্থায় র্যাহারা চালক তাহাদিগকে প্ৰশংসাপত্র দেওয়া চলে না । মধ্যমপন্থী ও চরমপন্থী এই উভয় দলই কনগ্রেস অধিকার করাকেই যদি দেশের কাজ করা বলিয়া একান্তভাবে না। মনে করিতেন, যদি দেশের সত্যকার কর্মক্ষেত্রে ইহারা প্ৰতিষ্ঠা লাভ করিতে থাকিতেন- দেশের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অন্নের অভাব মোচন করিবার জন্য যদি ইহারা নিজের শক্তিকে নানা পথে অহরহ একাগ্রমনে নিয়োজিত করিয়া রাখিতেন, দেশহিতের সত্যকার সাধনা ও সত্যকার সিদ্ধি কাহাকে বলে তাহার স্বাদ যদি পাইতেন এবং দেশের জনসাধারণের সঙ্গে কায়মনোবাক্যে যোগ দিয়া দেশের প্রাণকে দেশের শক্তিকে প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করিতেন, তাহা হইলে কনগ্রেস-সভার মঞ্চ জিতিয়া লইবার চেষ্টায় এমন উন্মত্ত হইয়া উঠিতেন না । কনগ্রেসে হার হইলেও দেশের মধ্যে হার হয় না ; শনৈঃ শনৈঃ প্ৰত্যহ প্ৰত্যেকের অশ্রান্ত চেষ্টায় দেশের হৃদয়ের মধ্য দিয়া পথ করিয়া চলিলে তবেই তাহাকে চলা বলে এবং সেই পথের চরম গম্যস্থান সভাপতির আসন নহে, এমন-কি, ঐ মঞ্চটা তাহার পান্থশালাও নহে । আর যদিই মনে কর কনগ্রেসের কর্তৃত্বলাভ দেশহিতসাধনের একটা চরিতার্থতা, তবে কি এতবড়ো একটা সম্পদকে এমন অধৈর্য ও প্ৰমত্ততার সহিত কড়াকড়ি করিতে হয় । ইহাতে যাহাকে চাই তাহাকেই কি অপমান করা হয় না । কাজির বিচারের কথা মনে আছে ? দুই স্ত্রীলোক যখন একটি ছেলেকে নিজের ছেলে বলিয়া দেওয়া হউক । এই কথা শুনিয়া যথার্থ মা বলিয়া উঠিল, "ছেলে আমি চাই না, অপরকেই দেওয়া হউক ।” যে যথার্থ মা সে ছেলেকে নষ্ট করার চেয়ে নিজের দখল ত্যাগ করা এবং মকদ্দমায় হার-মানা অনায়াসে স্বীকার করে । এবারকার কাজির বিচারে কী দেখা গেল। দুই দিকেরই এই জিদ যে, বরং কনগ্রেস ভাঙিয়া যায় সেও ভালো, তবু হার মানিব না। ইহাতে এই প্রমাণ হয়, কোনো পন্থীই কনগ্রেসকে তেমন সত্য ও তেমন বড়ো করিয়া মনে করেন না । ইহা যে একটা জীবধমী পদার্থ, বিচ্ছিন্ন হইলে ইহার প্রাণহানি ও আঘাত লাগিলে ইহা দুর্বল হয়, তাহা কেহ নিজের প্রাণের মধ্যে তেমন করিয়া অনুভব করেন না। তাহার কারণ কি এই নহে, এই জিনিসটাকে বিশ বৎসর তা দিয়াও ইহার মধ্যে প্রাণপদার্থের পরিচয় পাওয়া যায় নাই ? সেইজন্য ইহা আমাদের দেশকে ত্যাগে ধৈর্যে দীক্ষিত করে নাই। আমাদের পরে এইজন্যই কনগ্রেসের দাবি অত্যন্ত দুর্বল— ইহা অতি অল্পও যেটুকু ভয়ে ভয়ে আমাদের কাছে চায় তাহাও পুরামাত্রায় পায় না। আমাদের অর্থ-সামৰ্থ্য-অবসরের উদ্যবৃত্ত হইতে অতি অকিঞ্চিৎকর পরিমাণেই এই কনগ্রেসের জন্য রাখিয়া থাকি এবং র্যাহারা রাখেন সেই কয়জনের সংখ্যাও এই বিশাল ভারতের জনসংখ্যার মধ্যে অতি যৎসামান্য । ] এই প্রসঙ্গে আমাদের নিবেদন এই যে, কনগ্রেসকে সত্য করিয়া তুলিতে গেলে তাহা কনগ্রেসের মঞ্চে বসিয়াই করা যায় না। দেশের ভিতরে সত্য কার্যে প্রবৃত্ত হইলে, সমস্ত দেশের লোককে গ্রামে