পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় bምO¢ আধুনিক সাহিত্য । আধুনিক সাহিত্য গদ্যগ্রন্থাবলীর পঞ্চম ভাগ -রূপে ১৩১৪ সালে প্রকাশিত হয় । , ‘বঙ্কিমচন্দ্ৰ প্ৰবন্ধটি চৈতন্য লাইব্রেরির বিশেষ অধিবেশনে পঠিত ও ১৩০১ সালের বৈশাখ মাসের সাধনায় প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে সংকলিত হইবার সময়, আধুনিক সাহিত্যে সংকলিত অন্যান্য অনেক প্রবন্ধের মতো, এই রচনারও বহু অংশ বর্জিত হয় । এই বৰ্জিত ভাগের প্রধান অংশগুলি গ্রন্থপরিচয়ে মুদ্রিত হইল। "বঙ্কিমচন্দ্ৰ' প্রবন্ধের সূচনাতেই (‘আধুনিক সাহিত্য' গ্রন্থে বর্জিত) রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছিলেন'গত বর্ষ শেষ হইবার অনতিপূর্বে বঙ্কিমচন্দ্র চিরকালের জন্য আমাদের মধ্য হইতে অপসৃত হইয়া গিয়াছেন । ‘যে-সকল রাজ্যে মহত্ত্ব বিরল নহে। সেখানে কোনো যশস্বী লোকের অন্তর্ধান হইলে সমস্ত দেশ শোক করিতে থাকে। আমাদের এই দুর্ভাগ্য দেশে শুভ দৈববশে কদাচিৎ ক্ষণজন্ম পুরুষ জন্মগ্রহণ করেন, তথাপি, জীবনের কার্য সমাধা করিয়া যখন তাহারা সংসার ক্ষেত্র হইতে অন্তরিত হন। তখন এই জড়তাপন্ন দরিদ্র দেশ তীহাদের অভাব যথার্থরাপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে না । “কিন্তু এ কথা স্বীকার করিতে ইচ্ছা করে না । লেখনী সহজেই লিখিতে চাহে যে, অদ্য সমস্ত বঙ্গদেশ বঙ্কিমচন্দ্রের বিয়োগদুঃখে শোকাতুর। যদি সত্যই বঙ্গদেশের সেই বেদনাবোধ থাকিত তবে আজিকার এই চিরবিচ্ছেদের মধ্যেও সাস্তুনার রশ্মি প্রকাশ পাইত । “অল্পদিনের মধ্যে আমাদের অনেকগুলি শোকের কারণ ঘটিয়াছে। প্ৰথমে রাজেন্দ্রলাল মিত্র চলিয়া গেলেন ; কিন্তু তাহার জন্মভূমি ঠাহাকে ভালো করিয়া বিদায়সম্ভাষণ করিল না। সেই নিৰ্ভীক মনস্বী পুরুষ দেশের জন্য র্তাহার সমস্ত জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন। তিনি জ্ঞানবিস্তার এবং লোকহিতের জন্য যাহা করিয়াছিলেন বিষয়ী লোক আপনার বৈষয়িক উন্নতি আপন স্বার্থসাধনের জন্য এত চিন্তা এত চেষ্টা এত সংগ্রাম করিতে পারে না । যে ক্ষেত্রেই ইংরেজ-বাঙালির মধ্যে বিরোধ ঘটিত সেইখানেই রাজেন্দ্রলাল দুর্বল স্বদেশের পক্ষ লইয়া বীরগর্বে অগ্রসর হইতেন ; যদি স্বদেশী বিদেশী কাহারও সাহায্য না পাইতেন তথাপি অটল সাহসে একাকী দণ্ডায়মান হইতে কুষ্ঠিত হইতেন না। তিনি যুদ্ধে চিরকাল অপরাঘুখ এবং অপরাজিত ছিলেন । এইরূপে অশ্রান্ত নিরলস থাকিয়া অহনিশি কঠিন পরিশ্রমে দেশের জন্য তিনি যে জীবন অকালে বিসর্জন করিলেন, দেশ তাহার সেই দুর্মুল্য জীবনের অবসানে অকৃত্রিম শোকের একবিন্দু অশ্রু ব্যয় করিয়াছিল কি না সন্দেহ। ‘রাজেন্দ্রলালের অধিকাংশ রচনা ইংরেজিতে । বিবিধার্থসংগ্ৰহ প্ৰকাশ করিয়া তিনি বঙ্গসাহিত্যের উন্নতিসাধনের যে চেষ্টা করিয়াছিলেন তাহাও বহুপূর্বের কথা। এই কারণে, যদিও র্তাহার নাম দেশবিখ্যাত ছিল তথাপি তিনি সর্বসাধারণের নিকট অন্তরঙ্গরূপে পরিচিত ছিলেন না । কিন্তু বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে সে কথা বলা যাইতে পারে না । “বিদ্যাসাগর সমস্ত প্ৰাণমন সমর্পণ করিয়া একাকী দুর্ধর্ষ তেজে দুঃসাধ্য কাৰ্য করিয়া গিয়াছেন। কাহারও স্তুতিনিন্দা কাহারও সহায়তার কোনো অপেক্ষা রাখেন নাই । যখন সহস্ৰ লোকের মঙ্গল সাধন করিয়াছেন তখনো তিনি একক, যখন সহস্ৰ লোকের সহিত যুদ্ধ করিয়াছেন তখনো তিনি একক। সুমহৎ সুদূর্ভর কার্যভােরসকল তিনি চিরজীবন অসামান্য সহিষ্ণুতা ও অধ্যবসায়ের সহিত একাকী বহন করিয়াছেন । বঙ্গভাষার প্রথম স্তর তিনি নির্মাণ করিয়াছেন, বিধবার দুঃখমোচনের জন্য নিষ্ঠুর সমাজের সহিত তিনি নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করিয়াছেন, দেশের বিদ্যাশিক্ষা স্বদেশীয়ের দ্বারা সাধন করিবার ভার লইয়া তিনি কৃতকাৰ্য হইয়াছেন এবং এই অলস অকৰ্মণ্য অনুদার দেশে আপনাকে একনিষ্ঠ পরিহিতব্ৰত অধ্যবসায় ও নিঃস্বাৰ্থ বদ্যান্যতার ”