পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bro o রবীন্দ্র-রচনাবলী বািহরচনা করিয়া আজ র্তাহাকে বেষ্টন করিয়া থাকিত যে, আমরা সাহিত্যভক্তগণ আর সহজে আমাদের গুরুর সমীপবতী হইতে পারিতাম না ।*** “আমাদের মধ্যে র্যাহারা সাহিত্যব্যবসায়ী তাহারা বঙ্কিমের কাছে যে কী চিরঋণে আবদ্ধ তাহা যেন কোনো কালে বিস্মৃত না হন।** এই মন্তব্যের পরেই রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছিলেন ‘বঙ্কিমের প্রতিভা যদি আমাদের পথ খনন করিয়া না দিত। তবে আমরা এতদিনে শিশুপাঠ গ্রন্থের প্রথমভাগ দ্বিতীয়ভাগ তৃতীয়ভাগ শেষ করিয়া বড়োজের চতুর্থ পঞ্চম ষষ্ঠ ভাগে গিয়া। উপনীত হইতাম । কিন্তু বঙ্গসাহিত্য বয়ঃপ্ৰাপ্ত হইত না । আজ আমাদের কোনো লেখা। যদি বয়স্ক লোকের পাঠযোগ্য শিক্ষিত লোকের সমাদরযোগ্য, বিদেশীয় ভাষায় অনুবাদযোগ্য হইয়া থাকে, কোনো রচনার একটি অংশও যদি সর্বদেশে ও সর্বকালে স্থায়ী হইবার উপযোগী সুসম্পূর্ণ পরিণতি লাভ করিয়া থাকে, তাহা অনেকটা পরিমাণে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রসাদে ।” বর্তমান মুদ্রণের ৫৩৭ পৃষ্ঠার ৩২শ ছত্রের অনুক্রমে (পরবর্তী অনুচ্ছেদের পূর্বাবধি) “সাধনায় মুদ্রিত ছিল “আমাদের যে অন্তঃপুরে সূর্যকিরণ এবং বায়ু -প্ৰবেশ নিষেধ সেখানে তিনি নিখিলবিশ্বের আনন্দপ্রবাহ সমীরিত করিবার পথ করিয়া দিয়াছেন, এবং যে বাঙালি-হৃদয় অনেক বয়স পর্যন্ত অন্তরের মধ্যে অপরিচিত দুর্বোিধ বিদেশীয় সাহিত্য সম্পূর্ণ গ্রহণে অসমর্থ হইয়া চিরজন্মের মতো অপরিপুষ্ট উপবাসকৃশ এবং হীনবল হইয়া থাকে তাহার দ্বারদেশে তিনি খাদ্য উপনীত করিবার ব্যবস্থা করিয়া গিয়াছেন । আমরা অপরাপর জাতির নিকট চিরদিন ঋণ গ্ৰহণ করিয়া অবশেষে কথঞ্চিৎ সুদ-সমেত তাহা পরিশোধপূর্বক যাহাতে নিজের নিকট আত্মসম্মান এবং পরের নিকট শ্ৰদ্ধার অধিকারী হইতে পারি। এমন সুবিধা তিনি করিয়া দিয়াছেন।” বঙ্কিমচন্দ্রের নিকট বিভিন্ন সময়ে যে উৎসাহ ও আনুকুল্য লাভ করিয়াছিলেন রবীন্দ্রনাথ প্ৰবন্ধশেষে তাহার উল্লেখ করিয়া বলেন “অধিক দিনের কথা নহে ; ইতিপূর্বেই যে সভায় আমি সাধারণের সমক্ষে** প্ৰবন্ধ পাঠ করিয়াছিলাম, বঙ্কিমচন্দ্ৰ তাহার সভাপতি থাকিয়া আমাকে পরম সম্মানিত এবং উৎসাহিত করিয়াছিলেন । তখন কে কল্পনা করিয়াছিল তাহার অনতিকাল পরে পুনশ্চ এই সাধারণ সভায় দাড়াইয়া তাহার বিয়োগে বঙ্গসাহিত্য এবং বঙ্গদেশের হইয়া আমাকে শোক প্রকাশ করিতে হইবে । কে জানিত আমার সহিত র্তাহার সেই শেষ ঐহিক সম্বন্ধ। একদিন আমার প্রথম বয়সে ২০ পৃ ৫৩৫, ২৯ ও ৩০ ছত্রের অন্তরনিবিষ্ট ছিল । ২১ পৃ ৫৩৭, ৬ষ্ঠ ছত্র দ্রষ্টব্য ২২ চৈতন্য লাইব্রেরির অধিবেশনে পঠিত “ইংরেজ ও ভারতবাসী, সাধনা, আশ্বিন-কার্তিক ১৩০০ । দ্রষ্টব্য রবীন্দ্র-রচনাবলী, দশম খণ্ড, পৃ. ৩৭৯-৪০৩ (সুলভ, বর্তমান খণ্ড, পৃ. ৬২৩-৩৮) । ২৩ দ্রষ্টব্য “জীবনস্মৃতি, প্ৰথম সংস্করণ, পৃ. ১৫২ ৷ ‘বউঠাকুরানীর হাট’ পড়িয়া বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লিখিয়াছিলেন ; রবীন্দ্রনাথ সে-সম্বন্ধে লিখিয়াছেন এই গল্প বেরোবার পরে বঙ্কিমের কাছ থেকে একটি অযাচিত প্ৰশংসাপত্র পেয়েছিলুম, সেটি ইংরেজি । ভাষায় লেখা । সে পত্রটি হারিয়েছে কোনো বন্ধুর অযত্নকরক্ষেপে । বঙ্কিম এই মত প্রকাশ করেছিলেন যে, বইটি যদিও কঁচা বয়সের প্রথম লেখা। তবু এর মধ্যে ক্ষমতার প্রভাব দেখা দিয়েছে- এই বইকে তিনি নিন্দা করেন নি। ছেলেমানুষের ভিতর থেকে আনন্দ পাবার এমন-কিছু দেখেছিলেন, যাতে অপরিচিত বালককে হঠাৎ একটা চিঠি লিখতে ঠাকে প্ৰবৃত্ত করলে। দুরের যে পরিণতি, অজানা ছিল সেইটি তার কাছে কিছু আশার আশ্বাস এনেছিল। তার কাছ থেকে এই উৎসাহবাণী আমার পক্ষে ছিল বহুমূল্য - সূচনা, বউঠাকুরানীর হাট, রবীন্দ্র-রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ (সুলভ সংস্করণ, প্ৰথম খণ্ড) ; অপিচ, “কবির ভণিতা” (১৩৭৫)