পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা । υν/• বিশেষ মালমসলার ফরমাশে তৈরি হয় না । কখনো কখনো কোনো অর্থনৈতিক রাষ্ট্রনৈতিক সমাজনৈতিক গোড়ামি জেগে উঠে রসস্থষ্টিশূলীয় ডিষ্ট্রেটরি করতে আসে, বাইরে থেকে দণ্ড হাতে তাদের শাসন চালায়, মনে করে চিরকালের মতো অপ্রতিহত তাদের প্রভাব । তাদের তকমা চোখ ভোলায় যাদের তারা রসরাজ্যের বাইরের লোক, তারা রবাহত ; এক-একটা বিশেষ রব শুনে অভিভূত হয়, ভিড় করে। রসের প্রকৃতি হচ্ছে যাকে বলা যায় গুহাহিত, অভাবনীয়, সে কোনো বিশেষ উত্তেজিত সাময়িকতার আইনকামুনের অধীন নয়। তার প্রকাশ এবং তার লুপ্তি মানবপ্রকৃতির যে নিগৃঢ় বিশেষত্বের সঙ্গে জড়িত তা কেউ স্পষ্ট নির্ণয় করতে পারে না । স্বভাবের গহন সৃষ্টিশালার গভীর প্রেরণায় মানুষ আপন খেলনা গড়ে আবার খেলনা ভাঙে। আমরা কারিগররা তার সেই ভাঙাগড়ার লীলায় উপকরণ জুগিয়ে আসছি । কিন্তু সেগুলো নিতান্ত খেলনা নয়, সেগুলো কীর্তি, প্রত্যেকবার মানুষ এই আশা করে, নইলে তার হাত চলে না। অথচ সেই সঙ্গেই একটা নিরাসক্ত বৈরাগ্যকে রক্ষা করতে পারলেই ভালো । আমার আশি বছর বয়সের সাহিত্যিক প্রয়াসকে সম্পূর্ণ আকারে পুঞ্জিত করবার এই যে চেষ্টা আজ দেখছি, এর মধ্যে নিশ্চিত অনুমান করছি অনেক গাথুনি আছে, যার উপরে আগামী কালের বিস্মরণের দূত প্রত্যহ অদৃশ্য কালিতে আসন্ন লুপ্তির চিহ্ন অঙ্কিত করে চলেছে। এ সম্বন্ধে আমার মনে কোনো মোহ নেই, এবং ক্ষোভ করাও বৃথা বলে মনে করি । • এই যদি সত্য হয়, তবে যে সুহৃদরা আমার রচনাগুলি রক্ষণীয় বলে গণ্য করছেন তাদের ইচ্ছাকে কী বলে সম্মান করা যায়। এ উপলক্ষে পৃথিবীতে জীববংশধারার ইতিহাস স্মরণের যোগ্য। কালের পরিবর্তিত গতির সঙ্গে অনেক জীব তাল রেখে চলতে পারেনি, প্রাণরঙ্গশালা থেকে সেই বেতালাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবাই তো সরেনি। অনেক আছে কালের সঙ্গে তাদের মিল ভাঙেনি ।