পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Šté রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন ছিল ছড়া যারা বানাতে পারত তাদের দেখে লোক বিম্মিত হত। এখন যারা না পারে তারাই অসাধারণ বলে গণ্য। পক্ষার ত্রিপদী মহলে আপন অবাধ অধিকারবোধের অক্লাস্ত উৎসাহে লেখায় মাতলুম। আট অক্ষর দশ অক্ষরের চৌকো-চোঁকে কত রকম শব্দভাগ নিয়ে চলল ঘরের কোণে আমার ছন্দ-ভাঙাগড়ার খেলা। ক্রমে প্রকাশ পেল দশজনের সামনে । এই লেখাগুলি যেমনি হোক এর পিছনে একটি ভূমিকা আছে— সে হচ্ছে একটি বালক, সে কুনে, সে একলা, সে একঘরে, তার খেলা, নিজের মনে । সে ছিল সমাজের শাসনের অতীত, ইস্কুলের শাসনের বাইরে । বাড়ির শাসনও তার হালকা ৷ পিতৃদেব ছিলেন হিমালয়ে, বাড়িতে দাদারা ছিলেন কতৃপক্ষ । জ্যোতিদাদা, যাকে আমি সকলের চেয়ে মানতুম, বাইরে থেকে তিনি আমাকে কোনো বাধন পরাননি । র্তার সঙ্গে তর্ক করেছি, নানা বিষয়ে আলোচনা করেছি বয়স্তের মতো । তিনি বালককেও শ্রদ্ধা করতে জানতেন । আমার আপন মনের স্বাধীনতার দ্বারাই তিনি আমার চিত্তবিকাশের সহায়তা করেছেন। তিনি আমার পরে কতৃত্ব করবার ঔৎসুক্যে যদি দৌরাত্ম্য করতেন তাহলে ভেঙে-চুরে তেড়ে-বেঁকে যা-হয় একটা কিছু হতুম, সেটা হয়তো ভদ্রসমাজের সন্তোষজনকও হত, কিন্তু আমার মতো একেবারেই হত না । s শুরু হল আমার ভাঙাছন্দে টুকরো কাব্যের পালা, উল্কাবৃষ্টির মতো ; বালকের যা-ত ভাবের এলোমেলো কাচা গাথুনি । এই রীতিভঙ্গের ঝোকটা ছিল সেই একঘরে ছেলের মজ্জাগত। এতে যথেষ্ট বিপদের শঙ্কা ছিল । কিন্তু এখানেও অপঘাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেছি। তার কারণ আমার ভাগ্যক্রমে সেকালে বাংলা সাহিত্যে খ্যাতির হাটে ভিড় ছিল অতি সামান্ত— প্রতিযোগিতার উত্তেজনা উত্তপ্ত হয়ে ওঠেনি। বিচারকের দণ্ড থেকে অপ্রশংসার অপ্রিয় আঘাত নামত, কিন্তু । কটুক্তি ও কুৎসার উত্তেজনা তখনও সাহিত্যে ঝাঝিয়ে ওঠেনি। له