পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট ৪•৭ ৷ তোমাদের রাজার লেজ প্রকাশ পাইয়াছে ; তিনি রামচন্দ্র, না রামদাস ? এমন তো । পূর্বে জানিতাম না। আমি তৎক্ষণাৎ কছিলাম, পূর্বে জানিবেন কিরূপে ? পূর্বে তো ছিল না। আপনাদের ঘরে বিবাহ করিতে আসিয়াছেন তাই যস্মিন দেশে যদাচার অবলম্বন कबैिब्रांप्इन '” রাজা জবাব শুনিয়া বড়োই সুখী। ভাবিলেন, রমাই হইতে র্তাহার এবং তঁাহার পূর্বপুরুষদের মুখ উজ্জল হইল ও প্রতাপাদিত্যের আদিত্য একেবারে চির-রাহগ্ৰস্ত হইল। রাজা যুদ্ধবিগ্রহের বড়ে একটা ধার ধরেন না । এই সকল ছোটোখাটো ঘটনাগুলিকে তিনি যুদ্ধবিগ্রহের ন্যায় বিষম বড়ো করিয়া দেখেন। এতদিন তাহার ধারণা ছিল যে র্তাহার ঘোরতর অপমানসূচক পরাজয় হইয়াছে। এ কলঙ্কের কথা দিনরাত্রি তাহার মনে পড়িত ও তিনি লজ্জায় পৃথিবীকে দ্বিধা হইতে অনুরোধ করিতেন। আজ র্তাহার মন অনেকটা সান্থন লাভ করিল যে সেনাপতি রমাই রণে জিতিয়া আসিয়াছে। কিন্তু তথাপি তাহার মন হইতে লজ্জার ভার একেবারে দূর হয় নাই। রাজা রমাইকে কহিলেন, “রমাই, এবারে গিয়া জিতিয়া আসিতে হইবে। যদি জয় হয় তবে তোমাকে আমার অঙ্গুরী উপহার দিব।” রমাই বলিল, “মহারাজ, জয়ের ভাবন কী ? রমাইকে যদি অন্তঃপুরে লইয়া যাইতে পারেন, তবে স্বয়ং শাশুড়ী ঠাকুরানীকে পর্যন্ত মনের সাধে ঘোল পান করাইয়া আসিতে পারি ।” রাজা কহিলেন, “তাহার ভাবনা ? তোমাকে আমি অন্তঃপুরেই লইয়া যাইব ।” রমাই কহিল, “আপনার অসাধ্য কী আছে ?” রাজারও তাঁহাই বিশ্বাস । তিনি কী না করিতে পারেন ? আনুগতবর্গের কেহ যদি বলে, “মহারাজের জয় হউক, সেবকের বাসন পূর্ণ করুন।” মহামহিম রামচন্দ্র রায় তৎক্ষণাৎ বলেন, “ই, তাহাই হইবে।” কেহ যেন মনে না করে এমন কিছু কাজ আছে, যাহা তাহা দ্বারা হইতে পারে না । তিনি স্থির করিলেন, রমাই ভঁড়িকে প্রতাপাদিত্যের অস্তঃপুরে লইয়া যাইবেন, স্বয়ং মহিষী-মাতার সঙ্গে বিদ্রুপ করাইবেন, তবে তাহার নাম রাজা রামচন্দ্র রায় । এতবড়ো মহৎ কাজটা যদি তিনি না করিতে পারিলেন তবে আর তিনি কিসের রাজা । চন্দ্রদ্বীপাধিপতি রামমোহন মালকে ভাকিয়া পাঠাইলেন । রামমোহন মাল পরাক্রমে ভীমের মতো ছিল । শরীর প্রায় সাড়ে চারি হাত লম্বা । সমস্ত শরীরে মাংসপেশী তরঙ্গিত । সে স্বগীয় রাজার আমলের লোক। রামচন্দ্রকে বাল্যকাল হইতে