পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8કના রবীন্দ্র-রচনাবলী ; , পালন কৰিয়াছে। রমাইকে সকলেই ভয় করে, রমাই যদি কাহাকেও ভয় করে তো সে এই রামমোহন। রামমোহন রমাইকে অত্যন্ত ঘৃণা করিত । রমাই তাহার ঘৃণার দৃষ্টিতে কেমন আপনা-আপনি সংকুচিত হইয়া পড়িত। রামমোহনের দৃষ্টি এড়াইতে পারিলে সে ছাড়িত না । রামমোহন আসিয়া দাড়াইল । রাজা কছিলেন, তাহার সঙ্গে পঞ্চাশ জন অনুচর যাইবে । রামমোহন তাহাদিগের সর্দার হইয়া যাইবে । রামমোহন কহিল, "যে আজ্ঞ । রমাই ঠাকুর যাইবেন কি ?” বিড়ালচক্ষু খর্বাকৃতি রমাই ঠাকুর সংকুচিত হইয়া পড়িল । অষ্টম পরিচ্ছেদ যশোহর রাজবাটীতে আজ কৰ্মচারীরা ভারি ব্যস্ত। জামাতা আসিবে, নানাপ্রকার উদযোগ করিতে হইতেছে । আহারাদির বিস্তৃত আয়োজন হইতেছে । চন্দ্রদ্বীপের রাজবংশ যশোহরের তুলনায় যে নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর, সে-বিষয়ে প্রতাপাদিত্যের সহিত মহিষীর কোনো মতান্তর ছিল না, তথাপি জামাতা আসিবে বলিয়। আজ র্তাহার অত্যন্ত আহলাদ হইয়াছে। প্রাতঃকাল হইতে বিভাকে তিনি স্বহস্তে সাজাইতে আরম্ভ করিয়াছেন - বিভা বিষম গোলযোগে পড়িয়াছে। কারণ, সাজাইবার পদ্ধতি সম্বন্ধে বয়স্ক মাতার সহিত যুবতী দুহিতার নানা বিষয়ে রুচিভেদ আছে ; কিন্তু হইলে হয় কী, বিভার কিসে ভালো হয়, মহিষী তাহ অবশু ভালো বুঝেন। বিভার মনে মনে ধারণা ছিল, তিনগাছি করিয়া পাতলা ফিরোজ রঙের চুড়ি পৰিলে তাহার শুভ্র কচি হাত দুইখানি বড়ো মানাইবে ; মহিষী তাহাকে সোনার আটগাছা মোট চুড়ি ও হীরার এক-একগাছ বৃহদাকার বাল পরাইয়া এত অধিক আনন্দিত হইয়া উঠিলেন যে, সকলকে দেখাইবার জন্য বাড়ির সমুদয় বুদ্ধা দাসী ও বিধবা পিলীদিগকে ডাকাইয়া পাঠাইলেন । বিভা জানিত যে তাহার ছোটো মুকুমার মুখপানিতে নথ কোনোমতেই মানায় না— কিন্তু মহিষী তাহাকে একটা বড়ে নর্থ পরাইয় তাহার মুখখানি একবার দক্ষিণ পাশ্বে একবার বাম পার্থে ফিরাইয়া গৰ্বসহকারে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। ইহাতেও বিভা চুপ করিয়া ছিল, কিন্তু মহিষী যে ছাদে তাহার চুল বাধিয়া দিলেন, তাহা তাহার একেবারে অসহ হইয়া উঠিল । সে গোপনে মুরমার কাছে গিয়া মনের মতো চুল বাধিয়া আসিল। কিন্তু তাছা মহিষীর নজর এড়াইতে পারিল না । মহিষী দেখিলেন, কেবল চুল বাধা