বউ-ঠাকুরানীর হাট । 8¥ግ রমাপতি কহিলেন, “আজ রাত্রে প্রহরীরা চারিদিকে সতর্ক আছে । আমি একবার চারিদিকে দেখিয়া আসি যদি কোথাও কোনো উপায় থাকে ৷” এই বলিয়া তিনি প্রস্থানের উপক্রম করিলেন । বিভা তাহাকে ধরিয়া কছিল, "মামা, তুমি কোথায় যাও। তুমি যাইয়ে না, তুমি আমাদের কাছে থাকে৷ ” রমাপতি কছিলেন, “বিভা, তুই পাগল হইয়াছিল। আমি কাছে থাকিলে কোনো উপকার দেখিবে না । ততক্ষণ আমি একবার চারিদিকের অবস্থা দেখিয়া আসি ।” বিভা তখন বলপূর্বক উঠিয়া দাড়াইল । হাত-পা থরথর করিয়া কঁাপিতেছে। কছিল, “মামা, তুমি আর-একটু এইখানে থাকে। আমি একবার দাদার কাছে যাই।” বলিয়া বিভা তাড়াতাড়ি উদয়াদিত্যের শয়নকক্ষে গিয়া উপস্থিত হইল । তখন ক্ষীণ চন্দ্র অস্ত যায় যায়। চারিদিকে অন্ধকার হইয়া অলিতেছে। কোথাও সাড়াশব্দ নাই। রামচন্দ্র রায় তাহার শয়নকক্ষের দ্বারে দাড়াইয়া দেখিলেন দুই পাশ্বে রাজ-অন্তঃপুরের শ্রেণীবদ্ধ কক্ষে দ্বার রুদ্ধ, সকলেই নিঃশঙ্কচিত্তে ঘুমাইতেছে। সম্মুখের প্রাঙ্গণে চারিদিকের ভিত্তির ছায়া পড়িয়াছে ও তাহার এক পাশ্বে একটুখানি জ্যোৎস্ন এখনো অবশিষ্ট রহিয়াছে। ক্রমে সেটুকুও মিলাইয়া গেল। অন্ধকার এক পা এক পা করিয়া সমস্ত জগৎ দখল করিয়া লইল । অন্ধকার দুরে বাগানের শ্রেণীবদ্ধ নারিকেল গাছগুলির মধ্যে আসিয়া জমিয়া বসিল । অন্ধকার কোল ঘেঁষিয়া অতি কাছে আসিয়া দাড়াইল । রামচন্দ্র রায় কল্পনা করিতে লাগিলেন, এই চারিদিকের অন্ধকারের মধ্যে না জানি কোথায় একটা ছুরি তাহার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। দক্ষিণে না বামে, সম্মুখে না পশ্চাতে ? ওই যে ইতস্তত এক-একটা কোণ দেখা যাইতেছে, উহার মধ্যে একটা কোণে তো কেহ মুখ গুজিয়া, সর্বাঙ্গ চাদরে ঢাকিয়া চুপ করিয়া বলিয়া নাই ? কী জানি ঘরের মধ্যে যদি কেহ থাকে। খাটের নিচে, অথবা দেয়ালের এক পাশে। তাছার সবর্ণঙ্গ শিহরিয়া উঠিল, কপাল দিয়া ঘাম পড়িতে লাগিল। একবার মনে হইল যদি মামা কিছু করেন, যদি তাহার কোনো অভিসন্ধি থাকে ? আস্তে আস্তে একটু সরিয়া দাড়াইলেন। একটা বাতাস আসিয়া ঘরের প্রদীপ নিবিয়া গেল। রামচন্দ্ৰ ভাবিলেন, কে এক জন বুঝি প্রদীপ নিবাইয়া দিল—কে এক জন বুঝি ঘরে আছে। রমাপতির কাছে ঘেষিয়া গিয়া ডাকিলেন, “মামা ।” মামা কহিলেন, পক্ষী বাবা - রামচন্দ্র রায় মনে মনে কছিলেন, বিভা কাছে থাকিলে ভালো হইত, মামাকে ভালো বিশ্বাস হইতেছে না। বিভা উদয়াদিত্যের কাছে একেবারে কাদিয়া গিয়া পড়িল, তাহার মুখ দিয়া আর
