পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ミや রবীন্দ্র-রচনাবলী একেবারে নত হইয়া পড়িয়াছে। যবন-চরণের মৃত্তিক তুমি কপালে ফোট৷ করিয়া পরিম্ভ। থাকে। তোমার ওই যবনের পদধূলিময় অকিঞ্চিৎকর মাথাটা ধূলিতে লুটাইবার সাধ ছিল, বিধাতার বিড়ম্বনায় তাহাতে বাধা পড়িল । এই তোমাকে স্পষ্টই বলিলাম। তুমি বলিয়াই বুঝিলে না, আজ রায়-বংশের কতবড়ো অপমান হইয়াছে, তুমি বলিয়াই আজ রায়-বংশের অপমানকারীর জন্ত মার্জনা ভিক্ষণ করিতে আসিয়াছ ।” বসন্ত রায় তখন ধীরে ধীরে বলিলেন, “প্রতাপ, আমি বুঝিয়াছি, তুমি যখন একবার ছুরি তোল, তখন সে ছুরি এক জনের উপর পড়িতেই চায়। আমি তাহার লক্ষ্য হইতে সরিয়া পড়িলাম বলিয়া আর-এক জন তাহার লক্ষ্য হইয়াছে। ভালো প্রতাপ, তোমার মনে যদি দয়া না থাকে, তোমার ক্ষুধিত ক্রোধ এক জনকে যদি গ্রাস করিতেই চায়, তবে আমাকেই বরুক। এই তোমার খুড়ার মাথা ( বলিয়া বসস্ত রায় মাথা নিচু করিয়া দিলেন )। ইহা লইয়া যদি তোমার তৃপ্তি হয় তবে লও। ছুরি আনে । এ মাথায় চুল নাই, এ মুখে যৌবনের রূপ নাই। যম নিমন্ত্রণলিপি পাঠাইয়াছে, সে সভার উপযোগী সাজসজ্জাও শেষ হইয়াছে । ( বসস্ত রায়ের মুখে অতি মৃদু হাস্তরেখা দেখা দিল । ) কিন্তু ভাবিয়া দেখো প্রতাপ, বিভা আমাদের দুধের মেয়ে, তার যখন ছুটি চক্ষু দিয়া অশ্রু পড়িবে তখন—” বলিতে বলিতে বসন্ত রায় অধীর উচ্ছাসে একেবারে কাদিয়া উঠিলেন, “আমাকে শেষ করিয়া ফেলো প্রতাপ । আমার বাচিয়া সুখ নাই । তাহার চোখে জল দেখিবার আগে আমাকে শেষ করিয়া ফেলো ।” প্রতাপাদিত্য এত ক্ষণ চুপ করিয়া ছিলেন। যখন বসস্ত রায়ের কথা শেষ হইল তখন তিনি ধীরে ধীরে উঠিয়া চলিয়া গেলেন। বুঝিলেন কথাটা প্রকাশ হইয়াছে। নিচে গিয়া প্রহরীদের ভাকাইয়া আদেশ করিলেন, রাজপ্রাসাদসংলগ্ন খাল এখনই যেন বড়ো বড়ো শালকাঠ দিয়া বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় । সেই খালে রামচন্দ্র রায়ের নৌকা আছে । প্রহরীদিগকে বিশেষ করিয়া সাবধান করিয়া দিলেন, আজ রাত্রে অস্তঃপুর হইতে কেহ যেন বাহির হইতে না পারে।