8२२ rł রবীন্দ্র-রচনাবলী লাগিল না। তিনি ভাবিতেছেন, “প্রতাপাদিত্য যে-রকম লোক দেখিতেছি তিনি কী না করিতে পারেন। বিভা ও উদয়াদিত্য যে মাঝে পড়িয়া কিছু করিতে পারিবেন, এমন ভরসা হয় না। এ বাড়ি হইতে কোনোমতে বাহির হইতে পারিলে বাচি * কিছুক্ষণ বাদে সুরমা উদয়াদিত্যকে মৃদ্ধশ্বরে কছিল, “আমাদের এখানে দাড়াইয়া থাকিলে যে কোনো ফল হইবে তাহা তো বোধ হয় না, বরং উলটা । পিতা যতই বাধা পাইবেন, ততই তাহার সংকল্প আরো দৃঢ় হইবে। আজ রাত্রেই কোনোমতে প্রাসাদ হইতে পলাইবার উপায় করিয়া দাও।” উদয়াদিত্য চিস্তিতভাবে কিয়ৎক্ষণ সুরমার মুখের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “তবে আমি যাই, বলপ্রয়োগ করিয়া দেখি গে।” * স্বরম দৃঢ়ভাবে সম্মতিহচক ঘাড় নাড়িয়া কছিল, “যাও।” উদয়াদিত্য র্তাহার উত্তরীয় বসন ফেলিয়া দিলেন, চলিলেন । সুরমা সঙ্গে সঙ্গে কিছুদূর গেল। নিভৃত স্থানে গিয়া সে উদয়াদিত্যের বক্ষ আলিঙ্গন করিয়া ধরিল। উদয়াদিত্য শির নত করিয়া তাহাকে একটি দীর্ঘ চুম্বন করিলেন ও মুহূর্তের মধ্যে চলিয়া গেলেন। তখন সুরমা তাহার শয়নকক্ষে আসিয়া উপস্থিত হইল । তাহার দুই চোখ বহিয়া অশ্র পড়িতে লাগিল। জোড়হস্তে কহিল, "মাগো, যদি আমি পতিব্ৰতা সতী হই, তবে এবার আমার স্বামীকে তাহার পিতার হাত হইতে রক্ষণ করে । আমি যে র্তাহাকে আজ এই বিপদের মধ্যে বিদায় দিলাম, সে কেবল তোর ভরসাতেই মা। তুই যদি আমাকে বিনাশ করিস, তবে পৃথিবীতে তোকে আর কেহ বিশ্বাস করিবে না।” বলিতে বলিতে কাদিয়া উঠিল । সুরমা সেই অন্ধকারে বসিয়া কতবার মনে মনে “মা” “মা” বলিয়া ডাকিল, কিন্তু মনে হইল যেন মা তাহার কথা শুনিতে পাইলেন না। মনে মনে তাহার পায়ে যে পুষ্পাঞ্জলি দিল মনে হইল যেন তিনি তাহ লইলেন না, তাহার পা হইতে পড়িয়া গেল। সুরম কাদিয়া কহিল, “কেন মা, আমি কী করিয়াছি ?” তাহার উত্তর শুনিতে পাইল না । সে সেই চারিদিকের অন্ধকারের মধ্যে দেখিতে পাইল, প্রলয়ের মূর্তি নাচিতেছে। স্বরম চারিদিক শূন্তময় দেখিতে লাগিল। সে একাকী সে-ঘরে আর বসিয়া থাকিতে পারিল না। বাহির হইয়া বিভার ঘরে আসিল । বসন্ত রায় কাতর স্বরে কহিলেন, "দাদা এখনো ফিরিল না, কী হইবে ?” সুরমা দেয়ালে ঠেল দিয়া দাড়াইয়া কহিল, “বিধাতা যাহা করেন।” রামচন্দ্র রায় তখন মনে মনে তাহার পুরাতন ভৃত্য রামমোহনের সর্বনাশ করিতে ছিলেন। কেন না, তাহা হইতেই এই সমস্ত বিপদ ঘটিল। তাহার যতপ্রকার