পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.8ミb" রবীন্দ্র-রচনাবলী “ইহাকে লইয়া অভ্যায়।” মন্ত্রী ভাবিলেন, এই অপদার্থটাকে এই বেল প্রতাপাদিত্যের ক্রোধের সামনে খাড়া করিয়া দিই। প্রতাপাদিত্যের বজ্র এক জন না এক জনের উপরে পড়িবেই— তা এই কলাগাছটার উপরেই পডুক, বাকি বড়ো, বড়ো গাছ রক্ষা পাক্ । রমাইকে দেখিয়াই প্রতাপাদিত্য একেবারে জলিয়া উঠিলেন। বিশেষত সে যখন প্রতাপাদিত্যকে সন্তুষ্ট করিবার জন্ত দাত বাহির করিয়া, অঙ্গভঙ্গী করিয়া একটা হান্তরসের কথা কহিবার উপক্রম করিল, তখন প্রতাপাদিত্যের আর সহ হইল না । তিনি অবিলম্বে আসন ত্যাগ করিয়া উঠিয়া দুই হাত নাড়িয়া দারুণ ঘৃণায় বলিয়া উঠিলেন, “দুর করে, দূর করে, উহাকে এখনই দূর করিয়া দাও। ওটাকে আমার সম্মুখে আনিতে কে কহিল ?” প্রতাপাদিত্যের রাগের সহিত যদি ঘৃণার উদয় না হইত, তবে রমাই ভাড় এ-যাত্রা পরিত্রাণ পাইত না । কেন না ঘৃণ্য ব্যক্তিকে প্রহার করিতে গেলেও স্পর্শ করিতে হয়। রমাইকে তৎক্ষণাৎ বাহির করিয়া দেওয়া হইল । মন্ত্রী কহিলেন, “মহারাজ, রাজজামাতা—” প্রতাপাদিত্য অধীর ভাবে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “রামচন্দ্র রায়—” মন্ত্রী কছিলেন, “হা, তিনি কাল রাত্রে রাজপুরী পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন।” প্রতাপাদিত্য দাড়াইয়া উঠিয়া কছিলেন, “পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন । প্রহরীরা গেল কোথায় ?” মন্ত্রী পুনরায় কছিলেন, “বহিদ্বর্ণরের প্রহরীরা পালাইয়া গেছে।” প্রতাপাদিত্য মুষ্টিবদ্ধ করিয়া কছিলেন, “পালাইয়া গেছে ? পালাইবে কোথায় ? যেখানে থাকে তাহদের খুজিয়া আনিতে হইবে । অন্তঃপুরের প্রহরীদের এখনই ডাকিয়া লইয়া এস।” মন্ত্রী বাহির হইয়া গেলেন। রামচন্দ্র রায় যখন নৌকায় চড়িলেন তখনো অন্ধকার আছে। উদয়াদিত্য, বসন্ত রায়, সুরমা ও বিভা সে-রাত্রে আসিয়া আর বিছানায় শুইল না। বিভা একটি কথা না বলিয়া, একটি অশ্রু না ফেলিয়া অবসন্নভাবে শুইয়া রহিল, সুরমা তাহার কাছে বলিয়া তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দিতে লাগিল। উদয়াদিত্য ও বসন্ত রায় চুপ করিয়া বসিয়া রছিলেন। অন্ধকার ঘরে পরস্পরের মুখ অস্পষ্টভাবে দেখা যাইতেছে। ঘরের মধ্যে যেন অদৃশু এক জন কে— অন্ধকার বল, আশঙ্কা বল, অদৃষ্ট বল— বসিয়া আছে, তাহার নিশ্বাস-পতনের শব্দ শুনা যাইতেছে। সদানন্দ-হৃদয় বসন্ত রায় চারিদিকে নিরানন্দ দেখিয়া একেবারে আকুল হইয়