পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Oo রবীন্দ্র-রচনাবলী বাধিয়াছে; তুই আমার নাম করিস। প্রতাপ জানে, এককালে বসন্ত রায় বলিষ্ঠ ছিল, সে তোর কথা বিশ্বাস করিবে।” لیم সীতারাম প্রতাপাদিত্যের কাছে কী জবাব দিবে, এতক্ষণ ধরিয়া - তাহাই ভাবিতেছিল। এ সম্বন্ধে উদয়াদিত্যের নাম করিতে কোনোমতেই তাহার মন উঠিতেছিল না। সে একটা বাকা-পা তিন-চোখে তালবৃক্ষাকৃতি ভূতকে আসামী করিবে বলিয়া একবার স্থির করিয়াছিল, কিন্তু বসন্ত রায়কে পাইয়া নিরপরাধ ভূতটাকে খালাস দিল । বসস্ত রায়ের কথায় সে তৎক্ষণাৎ রাজি হইল। তখন তিনি দ্বিতীয় প্রহরীর নিকট গিয়া কহিলেন, “ভাগবত, প্রতাপ জিজ্ঞাসা করিলে বলিয়ে বসস্ত রায় তোমাকে বাধিয়াছে।” সহসা ভাগবতের ধর্মজ্ঞান অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠিল, অসত্যের প্রতি নিতান্ত বিরাগ জন্মিল ; তাহার প্রধান কারণ, উদয়াদিত্যের প্রতি সে ভারি ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিয়ছিল । ভাগবত কহিল, “এমন কথা আমাকে আদেশ করিবেন না, ইহাতে আমার অধৰ্ম হইবে ।” বসন্ত রায় তাহার কাধে হাত দিয়া কহিলেন, “ভাগবত, আমার কথা শুন; ইহাতে কোনো অধৰ্ম নাই। সাধু লোকের প্রাণ বাচাইতে মিথ্যা কথা বলিতে যদি কোনো অধৰ্ম থাকিবে, তবে আমি কেন তোমাকে এমন অমুরোধ করিব ?” বসন্ত রায় তাহার কাধে হাত দিয়া পিঠে হাত দিয়া বার বার করিয়া বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন, ইহাতে কোনো অধৰ্ম নাই। কিন্তু লোকের যখন ধমৰ্ত্তান সহসা বিশেষ প্রবল হইয়া উঠে, তখন কোনো যুক্তিই তাহার কাছে খাটে না । সে কহিল, “না মহারাজ, মনিবের কাছে মিথ্যা কথা বলিব কী করিয়া ।” বসন্ত রায় বিষম অস্থির হইয়া উঠিলেন। ব্যাকুলভাবে কহিলেন, “ভাগবত, আমার কথা শুন, আমি তোমাকে বুঝাইয়া বলি, এ মিথ্যা কথায় কোনো পাপ নাই। দেখে। বাপু, আমি তোমাকে পরে খুব খুশি করিব,তুমি আমার কথা রাখে। এই লও আমার কাছে যাহা আছে, এই দিলাম।” | ভাগবত তৎক্ষণাৎ হাত বাড়াইল ও সেই টাকাগুলা মুহূর্তের মধ্যে তাহার ট্যাকে আশ্রয় লাভ করিল। বসন্ত রায় কিয়ৎপরিমাণে নিশ্চিস্ত হইয়া ফিরিয়া গেলেন। প্রতাপাদিত্যের নিকট প্রহরিদ্বয়ের ডাক পড়িয়াছে। মন্ত্রী তাহাদিগকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গেলেন। প্রতাপাদিত্য তখন তাহার উচ্ছসিত ক্রোধ দমন করিয়া স্থির গম্ভীর ভাবে বসিয়া আছেন। প্রত্যেক কথা ধীরে ধীরে স্পষ্টরূপে উচ্চারণ করিয়া কহিলেন, “কাল রুত্রে অন্তঃপুরের দ্বার খোলা হইল কী করিয়া ?”