পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট 8'මීA ছাড়িতে চায় না। কী জানি আমাকে উহার কিসের আবশুক। এক কালে যে দ্বধ ছিল, বুড়া হইয়া সে ঘোল হইয়া উঠিয়াছে, তা বিভা দুধের সাধ ঘোলে মিটাইতে চায় কেন ? আমি যাব শুনিয়া বিভা কাদে ! এমন আর কখনো শুনিয়াছ ? আমি ভাই, বিভার কারা দেখিতে পারি না।” বলিয়া গাহিতে লাগিলেন,

  • আমার যাবার সময় হল, আমায়ু কেন রাখিস ধরে, চোখের জলের বাধন দিয়ে বাধিস নে আর মায়াডোরে। ফুরিয়েছে জীবনের ছুটি, ফিরিয়ে নে তোর নয়ন দুটি, নাম ধরে আর ডাকিস নে ভাই,

যেতে হবে ত্বরা করে ।” , “ওই দেখো, ওই দেখে বিভার রকম দেখো । দেখ, বিভা, তুই যদি অমন করিয়া কাদিবি তো—” বলিতে বলিতে বসন্ত রায়ের অণর কথা বাহির হইল না । তিনি বিভাকে শাসন করিতে গিয়া নিজেকে আর সামলাইতে পারিলেন না, তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছিয়া হাসিয়া কহিলেন, "দাদা, ওই দেখো ভাই, মুরমা কাদিতেছে। এই বেলা ইহার প্রতিবিধান করো ; নহিলে আমি সত্য সত্যই থাকিয়া যাইব, তোমার জায়গাটি দখল করিয়া বসিব । ওই দুই হাতে পাকা চুল তোলাইব, ওই কানের কাছে এই ভাঙা দাতের পাটির মধ্য হইতে ফিসফিস করিব, আর কানের অত কাছে গিয়া আর যদি কোনো প্রকার অঘটন সংঘটন হয় তবে তাহার দায়ী অামি হইব না।” বসন্ত রায় দেখিলেন, কেহ কোনো কথা কহিল না, তখন তিনি কাতর হইয়া তাহার সেতারটা তুলিয়া লইয়া ঝন ঝন্‌ করিয়া বিষম বেগে বাজাইতে শুরু করিলেন । কিন্তু বিভার চোখের জল দেখিয়া তাহার সেতার বাজাইবার বড়োই ব্যাঘাত হইতে লাগিল, তাহার চোখ মাঝে মাঝে ঝাপসা হইয়া আসিতে লাগিল, মাঝে মাঝে বিভাকে এবং উপস্থিত সকলকে তিরস্কারচ্ছলে রাশ রাশ কথা বলিবার বাসনা হইতে লাগিল, কিন্তু আর কথা জোগাইল না, কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল, সেতার বন্ধ করিয়া নামাইয়া রাখিতে হইল। অবশেষে বিদায়ের সময় আসিল । * উদয়াদিত্যকে দীর্ঘকাল আলিঙ্গন করিয়া শেষ কথা এই বলিয়া গেলেন, “এই সেতার রাখিয়া গেলাম দাদা, আর সেতার বাজাইব না । সুরমা ভাই মুখে থাকো । বিভা—” কথা শেষ হইল না, অশ্র মুছিয়া পালকিতে উঠিলেন। tā