পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* বউ-ঠাকুরানীর হাট - 8&S মাটির ঢিপির সিংহাসন গড়িয়া, রাজা, মন্ত্রী ও সভাসদ সাজিয়ী রাজসভার অনুকরণে । খেলা করিতেছিল। রাজার কানে যায়, তিনি তাহদের পিতাদের ডাকিয়া বিলক্ষণ শাসন করিয়া দেন। f আজ মহারাজ গদির উপরে তাকিয়া ঠেসান দিয়া গুড়গুড়ি টানিতেছেন। সম্মুখে এক ভীরু দরিদ্র অপরাধী খাড়া রহিয়াছে, তাহার বিচার চলিতেছে। সে ব্যক্তি কোনো স্বত্রে প্রতাপাদিত্য ও রামচন্দ্র রায় সংক্রাস্ত ঘটনা শুনিতে পায় ও তাহা লইয়া আপনা-আপনির মধ্যে আলোচনা করে, তাহাই শুনিয়া তাহার শত্রুপক্ষের একজন সে-কথাট। রাজার কানে উত্থাপন করে। রাজা মহা খাপ হইয়া তাহাকে তলব করেন। তাহাকে ফঁাসিই দেন, কি নির্বাসনই দেন, এমনি একটা কাও বধিয়া গেছে । ళొ রাজা বলিতেছেন, “বেটা, তোর এতবড়ো যোগ্যতা ।” সে কাদিয়া কহিতেছে, “দোহাই মহারাজ, আমি এমন কাজ করি নাই ।” মন্ত্ৰী কহিতেছেন, “বেটা, প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে আমাদের মহারাজের তুলনা ।” দেওয়ান কহিতেছেন, “বেটা, জানিল না, যখন প্রতাপাদিত্যের বাপ প্রথম রাজা হয়, তাহাকে রাজটিক পরাইবার জন্ত সে আমাদের মহারাজার স্বগীয় পিতামহের কাছে আবেদন করে। অনেক কাদাকাটা করাতে তিনি তাহার বা পায়ের কড়ে আঙুল দিয়া তাহাকে টিক পরাইয়া দেন ।” রমাই ভাড় কহিতেছে, “বিক্রমাদিত্যের ছেলে প্রতাপাদিত্য,উপহার তো দুই পুরুষে রাজা প্রতাপাদিত্যের পিতামহ ছিল কেঁচো, কেঁচোর পুত্র হইল জোক, বেটা প্রজার রক্ত খাইয়া খাইয়া বিষম ফুলিয়া উঠিল, সেই জোকের পুত্র আজ মাথা খুড়িয়া খুড়িয়া মাথাটা কুলোপনা করিয়া তুলিয়াছে ও সাপের মতো চক্র ধরিতে শিখিয়াছে। আমরা পুরুষানুক্রমে রাজসভায় ভাড়বৃত্তি করিয়া আসিতেছি, আমরা বেদে, আমরা জাত-সাপ চিনি না ।” রাজা রামচন্দ্র রায় বিষম সন্তুষ্ট হইয়া সহস্তবদনে গুড়গুড়ি টানিতে লাগিলেন । আজকাল প্রত্যহ সভায় প্রতাপাদিত্যের উপর একবার করিয়া আক্রমণ হয়। প্রতাপাদিত্যের পৃষ্ঠ লক্ষ্যপূর্বক শব্দভেদী বচন-বাণ বর্ষণ করিয়া সেনানীদের তুণ নিঃশর হইলে সভা ভঙ্গ হয় । যাহা হউক আজিকার বিচারে অপরাধী অনেক কণদণকাটি করাতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ রামচন্দ্র রায় কহিলেন, “আচ্ছা যা, এ-যাত্রা বাচিয়া গেলি, ভবিষ্যতে সাবধান থাকিস ।” অন্তান্ত সভাসদ চলিয়া গেল, কেবল মন্ত্রী ও রমাই ভাড় রাজার কাছে রহিল । প্রতাপাদিত্যের কথাই চলিতে লাগিল । Ws >