পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se রবীন্দ্র-রচনাবলী হারিয়াই আছি, তোমার কাছে আমি চিরকাল মূৰ্খ।" লীতারাম মনে মনে ভাবিল, খুব জবাব দিয়াছি, বেশ কথা জোগাইয়াছে। আবার কছিল, ”আচ্ছা ভাই, কথাটা যদি তোমার পছন্দ না হইল, কী বলিয়া ডাকিলে তুমি খুশি হইবে, আমাকে বলে ।” রুক্মিণী হাসিয়া কছিল, “বলো প্রাণ ।” সীতারাম কহিল, “প্রাণ ।” রুক্মিণী কহিল, “বলো প্রিয়ে।” । সীতারাম কছিল, “প্রিয়ে ।” রুক্মিণী কহিল, “বলো প্রিয়তমে।” সীতারাম কছিল, “প্রিয়তমে।” রুক্মিণী কহিল, “বলে প্রাণঞ্জিয়ে ।” সীতারাম কহিল, “প্রাণপ্ৰিয়ে। আচ্ছ ভাই প্রাণপ্রিয়ে, তুমি যে টাকাটা দিলে, তাহার সুদ কত লইবে ?” ਾਂ রুক্মিণী রাগ করিল, মুখ বাকাইয়া কহিল, “যাও যাও, এই বুঝি তোমার ভালোবাসা। মুদের কথা কোন মুখে জিজ্ঞাসা করিলে ?” সীতারাম আনন্দে উচ্ছসিত হইয়া কহিল, “না না, সে কি হয় ? আমি কি ভাই সত্য বলিতেছিলাম ? আমি যে ঠাট্টা করিতেছিলাম, এইটে আর বুঝিতে পারিলে না ? ছি প্রিয়তমে।” সীতারামের মায়ের কী রোগ হইল জানি না, আজকাল প্রায় মাঝে মাঝে সে জামাইবাড়ি যাইতে লাগিল ও টাকা বাহির করিয়া দিবার বিষয়ে তাহার স্মরণশক্তি একেবারে বিলুপ্ত হইয়া গেল। কাজেই সীতারামকে প্রায় মাঝে মাঝে রুক্মিণীর কাছে আসিতে হইত। আজকাল দেখা যায় সীতারাম ও রুক্মিণীতে মিলিয়া অতি গোপনে কী একটা বিষয় লইয়া পরামর্শ চলিতেছে। অনেকদিন পরামর্শের পর সীতারাম কহিল, “আমার ভাই অত ফন্দী আসে না, এ বিষয়ে ভাগবতের সাহায্য না লইলে চলিবে না।” ( সেইদিন সন্ধ্যাবেলায় অত্যস্ত ঝড় হইতেছে। রাজবাড়ির ইতস্তত দুমদাম করিয়া দরজা পড়িতেছে। বাতাস এমন বেগে বহিতেছে যে, বাগানের বড়ো বড়ো গাছের শাখা হেলিয়া ভূমি স্পর্শ করিতেছে। বস্তার মুখে ভগ্ন চুর্ণ গ্রামপল্লীর মতো ঝড়ের মুখে ছিন্নভির মেঘ ছুটিয়া চলিয়াছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ, ঘন ঘন গর্জন। উদয়াদিত্য চারি দিকের দ্বার রুদ্ধ করিয়া ছোটো একটি মেয়েকে কোলে