পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૭8 ** রবীন্দ্র-রচনাবলী ভাগবত কহিল, “বটে ? তা এতই যদি তোমার টাকা হইয়া থাকে যে এক মুঠ জলে ফলিয়া দিলেও কিছু না আসে যায়, তা হইলে আমাকে গোটা দশেক দিয়া ফেলো। কিন্তু আগে হইতে বলিয়া রাখিতেছি, আমার শুধিবার শক্তি নাই ।” সীতারাম কহিল, “সেজন্যে দাদা তোমাকে ভাবিতে হইবে না।” ' সীতারামের কাছে এইরূপ সাহায্যপ্রাপ্তির আশা পাইয়া ভাগবত বন্ধুতার উচ্ছাসে যে নিতান্ত উচ্ছসিত হইয়া উঠিয়াছিল, তাহা মহে । আর-এক ছিলিম তামাক সাজিয়া চুপ করিয়া বসিয়া টানিতে লাগিল । ஆதித் সীতারাম আস্তে আস্তে কথা পাড়িল, “দাদা, রাজার অন্তায় বিচারে আমাদের তো অন্ন মারা গেল।” ভাগবত কছিল, “কই তোমার ভাবে তো তাহা বোধ হইল না ।” সীতারামের বদান্তত ভাগবতের বড়ো সহ হয় নাই, মনে মনে কিছু চাটিয়াছিল। সীতারাম কহিল, “না ভাই, কথার কথা বলিতেছি । আজ না যায় তো দশ দিন পরে তো বাইবে।” ভাগবত কহিল, “তা রাজা যদি অন্তায় বিচার করেন তো আমরা কী করিতে পারি ।” # সীতারাম করিল, “আহা যুবরাজ যখন রাজা হইবে, তখন যশোরে রামরাজত্ব হইবে, ততদিন যেন আমরা বাচিয়া থাকি ৷” ভাগবত চটিয়া গিয়া কহিল, “ও-সব কথায় আমাদের কাজ কী ভাই ? তুমি বড়োমামুষ লোক, তুমি নিজের ঘরে বলিয়া রাজা-উজির মার, সে শোভা পায়। আমি গরিব মানুষ, আমার অতটা ভরসা হয় না।” সীতারাম কহিল, “রাগ কর কেন দাদা ? কথাটা মন দিয়া শোনোই না কেন ?” বলিয়া চুপি চুপি কী বলিতে লাগিল । ভাগবত মহাকুদ্ধ হইয়া বলিল, “দেখে সীতারাম, আমি তোমাকে স্পষ্ট করিয়া বলিতেছি, আমার কাছে অমন কথা তুমি মুখে উচ্চারণ করিয়ে না।” সীতারাম সেদিন তো চলিয়া গেল। ভাগবত ভারি মনোযোগ দিয়া সমস্ত দিন কী একটা ভাবিতে লাগিল, তাহার পরদিন সকালবেলায় সে নিজে সীতারামের কাছে গেল। সীতারামকে কহিল, “কাল যে কথাটা বলিয়াছিলে বড়ো পাক কথা বলিয়াছিলে ।” * f সীতারাম গর্বিত হইয়া উঠিয়া কছিল, “কেমন দাদা, বলি নাই ।” ভাগবত কহিল, “আজ সেই বিষয়ে তোমার সঙ্গে পরামর্শ করিতে আসিয়াছি।”