পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8:് * রবীন্দ্র-রচনাবলী আমিই শুধু রই বাকি। যা ছিল তা গেল চলে, রইল যা তা কেবল ফাকি আমার বলে ছিল যারা আর তো তারা দেয় না সাড়া, কোথায় তারা, কোথায় তারা ? কেঁদে কেঁদে কারে ডাকি । বলু দেখি মা, শুধাই তোরে, আমার কিছু রাখলি নে রে ? আমি কেবল আমায় নিয়ে কোন প্রাণেতে বেঁচে থাকি । কে জানে কী ভাবিয়া বৃদ্ধ এই গান গাহিতেছিলেন । বুঝি তাহার মনে হইতেছিল, গান গাহিতেছি, কিন্তু যাহাঁদের গান শুনাইতাম, তাহারা যে নাই। গান আপনি আসে, কিন্তু গান গাহিয়া যে আর সুখ নাই। এখনো আনন্দ ভুলি নাই, কিন্তু যখনই আনন্দ জন্মিত, তখনই যাহাদের আলিঙ্গন করিতে সাধ যাইত, তাহারা কোথায় ? যেদিন প্রভাতে রায়গড়ে ওই তালগাছটার উপরে মেঘ করিত, মনটা আনন্দে নাচিয়া উঠিত সেই দিনই আমি যাহাদের দেখিতে যশোরে যাত্রা করিতাম, তাহাদের কি আর দেখিতে পাইব না ? এখনো এক-একবার মনটা তেমনি আনন্দে নাচিয়া উঠে কিন্তু হায় – এই সব বুঝি ভাবিয়া আজ বিকালবেলায় অস্তমান স্বর্যের দিকে চাহিয়া বৃদ্ধ বসন্ত রায়ের মুখে আপনা-আপনি গান উঠিতেছে — আমিই শুধু রইমু বাকি । এমন সময়ে খা সাহেব আসিয়া এক মস্ত সেলাম করিল। খী সাহেবকে দেখিয়া বসন্তু রায় উৎফুল্ল হইয়া কহিলেন, “র্থ সাহেব, এসে এলো ।” অধিকতর নিকটে গিয়া ব্যস্তসমস্ত হইয়া কছিলেন, “সাহেব, তোমার মুখ অমন মলিন দেখিতেছি কেন ? মেজাজ ভালো আছে তো ?” খ। সাহেব । “মেজাজের কথা আর জিজ্ঞাসা করিবেন না, মহারাজ। আপনাকে মলিন দেখিয়া আমাদের মনে আর সুখ নাই। একটি বয়েত আছে— রাত্রি বলে আমি কেহই নই, আমি যাহাকে মাথায় করিয়া রাখিয়াছি সেই চাদ, তাহারই সহিত আমি একত্রে হালি, একত্রে স্নান হইয়া যাই – মহারাজ, আমরাই বা কে, আপনি না হালিলে আমাদের হাসিবার ক্ষমতা কী ? আমাদের আর সুখ নাই, জনাব।” বসন্ত রায় ব্যগ্র হইয়া কহিলেন, “সে কী কথা সাহেব ? আমার তো অমুখ কিছুই নাই, আমি নিজেকে দেখিয়া নিজে হাসি, নিজের আনন্দে নিজে থাকি, আমার অমুখ কী খ। সাহেব ?”