পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

કૅન્ક রবীন্দ্র-রচনাবলী “এই দেখুন কাকামহাশয়, এক সর্বনেশে চিঠি আসিয়াছে।” বলিয়া এক চিঠি বসন্ত রায়ের হাতে দিলেন । বলপ্ত রায় সে চিঠি পড়িতে না পড়িতে মহিষী কাদিয়া বলিতে লাগিলেন, “আমার কিসের মুখ আছে ? উদয়— বাছা আমার কিছু জানে না । তাহাকে তে মহারাজ— সে যেন রাজার মতোই হয় নাই, কিন্তু তাহাকে তো আমি গর্ভে ধারণ করিয়াছিলাম, লে তো আমার আপনার সস্তান বটে। জানি না, বাছা সেখানে কী করিয়া থাকে, একবার আমাকে দেখিতেও দেয় না।” মহিষী আজকাল যে কথাই পাড়েন, উদয়াদিত্যের কথা তাহার মধ্যে এক স্থলে আসিয়া পড়ে। ওই কষ্টটাই তাহার প্রাণের মধ্যে যেন দিনরাত জাগিয়া আছে । চিঠি পড়িয়া বসন্ত রায় একেবারে অবাক হইয়া গেলেন, চুপ করিয়া বসিয়া মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বসস্ত রায় মহিষীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ চিঠি তো কাহাকেও দেখাও নি মা !” মহিষী কহিলেন, “মহারাজ এ চিঠির কথা শুনিলে কি আর রক্ষ রাখিবেন, বিভাও কি তাহা হইলে আর বঁচিবে ।” বসন্ত রায় কহিলেন, “ভালো করিয়াছ। এ চিঠি আর কাহাকেও দেখাইয়ো না, বউমা। তুমি বিভাকে শীঘ্র তাহার শ্বশুরবাড়ি পাঠাইয়া দাও। মান-অপমানের কথা ভাবিয়ো না ।” মহিষী কহিলেন, “আমিও তাহাই মনে করিয়াছি । মান লইয়া আমার কাজ নাই, আমার বিভা সুখী হইলেই হইল। কেবল ভয় হয় পাছে বিভাকে তাহারা অষত্ব করে ।* বসস্ত রায় কহিলেন, “বিভাকে অযত্ন করিবে ! বিভা কি অম্বত্বের ধন । বিভী যেখানে যাইবে সেইখানেই আদর পাইবে। অমন লক্ষ্মী অমল সোনার প্রতিম। আর কোথায় আছে। রামচন্দ্র কেবল তোমাদের উপর রাগ করিয়াই এই চিঠি লিখিয়াছে, আবার পাঠাইয়া দিলেই তাহার রাগ পড়িয়া যাইবে।” বসন্ত রায় তাহার সরল হৃদয়ে সরল বুদ্ধিতে এই বুঝিলেন। মহিষীও তাছাই বুঝিলেন । 聯 বসন্ত রায় কহিলেন, “বাড়িতে রাষ্ট্র করিয়া দাও যে, বিভাকে চন্দ্রদ্বীপে পাঠাইতে অনুরোধ করিয়া রামচন্দ্র এক চিঠি লিখিয়াছে। তাহা হইলে বিভা নিশ্চয়ই সেখানে ঘাইতে আর অমত করিবে না।”