পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ぬま রবীন্দ্র-রচনাবলী বসন্ত রায় কহিলেন, “কেন দাদা, এ বুড়াকে কি ভুলিয়া গেছিল।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমি যাই— একবার পিতার পা ধরিয়া কাদিয়া ভিক্ষা চাই গে, তিনি হয়তে রায়গড়ে যাইতে সন্মতি দিবেন।” 劇 * বসন্ত রায় অস্থির হইয়া উঠিয়া কছিলেন, "দাদা, আমার কথা শোন— সেখানে যাস নে, সে-চেষ্টা করা নিষ্ফল ।” উদয়াদিত্য নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “তবে . যাই । আমি কারাগারে ফিরিয়া शाहे ।” বসন্ত রায় তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিলেন, “কেমন যাইবি যা দেখি। আমি ষাইতে দিব না।” উদ্বয়াদিত্য কহিলেন, "দাদামহাশয়, এ-হতভাগ্যকে লইয়া কেন বিপদকে ডাকিতেছ। আমি যেখানে থাকি সেখানে কি তিলেক শান্তির সম্ভাবনা আছে ?” বসন্ত রায় কহিলেন, "দাদা, তোর জন্য যে বিভাও কারাবাসিনী হইয়া উঠিল । এই তাহার নবীন বয়সে সে কি তাহার সমস্ত জীবনের সুখ জলাঞ্জলি দিবে ?” বসন্ত রায়ের চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল । তখন উদয়াদিত্য তাড়াতাড়ি কহিলেন, “তবে চলো চলে। দাদামহাশয় ।” সীতারামের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সীতারাম, প্রাসাদে তিনখানি পত্র পাঠাইতে চাই ।” সীতারাম কহিল, “নৌকাতেই কাগজ-কলম আছে, আনিয়া দিতেছি। শীঘ্র করিয়া লিখিবেন, অধিক সময় নাই।” উদয়াদিত্য পিতার কাছে মার্জন ভিক্ষা করিলেন । মাতাকে লিখিলেন, “মা, আমাকে গর্তে ধরিয়া তুমি কখনো সুখী হইতে পার নাই। এইবার নিশ্চিস্ত হও মা— আমি দাদামহাশয়ের কাছে যাইতেছি, সেখানে আমি সুখে থাকিব, স্নেহে থাকিব, তোমার কোনো ভাবনার কারণ থাকিবে না।” বিভাকে লিখিলেন, “চিরায়ুষ্মতীযু- তোমাকে আর কী লিখিব— তুমি জন্ম জন্ম মুখে থাকো— স্বামিপৃহে গিয়া সুখের সংসার পাতিয়া সমস্ত দুঃখকষ্ট ভুলিয়া যাও ” লিখিতে লিখিতে উদয়াদিত্যের চোখ জলে পুরিয়া আসিল । সীতারাম সেই চিঠি তিনখানি একজন দাড়ির হাত দিয়া প্রাসাদে পঠাইয়া দিল । সকলে নৌকাতে উঠিতেছেন– এমন সময়ে দেখিলেন, কে একজন ছুটয় তাহদের দিকে আসিতেছে। সীতারাম চমকিয়৷ ৰলিয়া উঠিল, “ওই রে— সেই ডাকিনী আসিতেছে।” দেখিতে দেখিতে রুক্মিণী কাছে আসিয়া পৌঁছিল। তাহার চুল এলোথেলো, তাহার অঞ্চল খসিয়া পড়িয়াছে,