পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরাণীর হাট 8వ రి তাহার জলন্ত অঙ্গারের মতো চোখ দুটা অগ্নি উদগীর করিতেছে— তাছার বার বার প্রতিহত বাসনা, অপরিতৃপ্ত প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তির যন্ত্রণায় অস্থির হইয়। সে যেন ষাহাকে সম্মুখে পায় তাহাকেই খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিড়িয়া ফেলিয়। রোব মিটাইতে চায়। যেখানে প্রহরীর আগুন নিবাইতেছিল, সেখানে বার বার ধাক্কা খাইয়া ক্রোধে অধীর হইয়া পাগলের মতো প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করে – একেবারে প্রতাপাদিত্যের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য বার বার নিষ্ফল চেষ্টা করে, প্রহরীরা তাহাকে পাগল মনে করিয়া মারিয়া ধরিয়া তাড়াইয়া দেয়। যন্ত্রণায় অস্থির হুইয়। সে প্রাসাদ হইতে ছুটিয়া আসিতেছে। বাঘিনীর মতো সে উদয়াদিত্যের উপর লাফাইয়া পড়িবার চেষ্ট করিল। সীতারাম মাঝে আসিয়া পড়িল ; চীৎকার করিয়া সে সীতারামের উপর বাপাইয়া পড়িল, প্রাণপণে তাহাকে দুই হাতে জড়াইয়া ধরিল— সহসা সীতারাম চীৎকার করিয়া উঠিল, দাড়ি মাঝিরা তাড়াতাড়ি আসিয়া বলপূর্বক রুক্মিণীকে ছাড়াইয়া লইল। আত্মঘাতী বৃশ্চিক যেমন নিজের সর্বাঙ্গে হল ফুটাইতে থাকে, তেমনি সে অধীর হইয়। নিজের বক্ষ নখে আঁচড়াইয়া চুল ছিড়িয়া চীৎকার করিয়৷ কহিল, “কিছুই হইল না, কিছুই হইল না— এই আমি মরিলাম, এ স্ত্রীহত্যার পাপ তোদের হইবে।” সেই অন্ধকার রাত্রে এই অভিশাপ দিকে দিকে ধ্বনিত হইয়া উঠিল । মুহূর্তমধ্যে বিদ্যুদ্বেগে রুক্মিণী জলে বাপাইয়া পড়িল। বর্ষায় খালের জল অত্যস্ত বাড়িয়াছিল – কোথায় সে তলাইয়া গেল ঠিকানা রহিল না। সীতারামের কাধ হইতে রক্ত পড়িতেছিল, চাদর জলে ভিজাইয়। কাধে বাধিল । নিকটে গিয়া দেখিল, উদয়াদিত্যের কপালে ঘর্মবিন্দু দেখা দিয়াছে, তাহার হাত পা শীতল হইয়া গিয়াছে, তিনি প্রায় অজ্ঞান হইয়া গিয়াছেন— বসন্ত রায়ও যেন দিশহারা হইয়া অবাক হইয়া গিয়াছেন। দাড়িগণ উভয়কে ধরিয়া নৌকায় তুলিয়৷ তৎক্ষণাৎ নৌকা ছাড়িয়া দিল । সীতারাম ভীত হইয়া কহিল, “যাত্রার সময় কী অমঙ্গল ।” একত্রিংশ পরিচ্ছেদ উদয়াদিত্যের নৌকা খাল অতিক্রম করিয়া নদীতে গিয়া পৌছিল, তখন সীতারাম নৌকা হইতে নামিয়া শহরে ফিরিয়া আসিল । আসিবার সময় যুবরাজের নিকট হইতে র্তাহার তলোয়ারটি চাহিয়া লইল । উদয়াদিত্যের তিনখানি পত্র একটি লোকের হাত দিয়া সীতারাম প্রাসাদে প্রেরণ করিয়াছিল বটে, কিন্তু সে চিঠি কয়খানি কাহারও হাতে দিতে,তাহাকে