• রবীন্দ্র-রচনাবলী । গেলেন। কিন্তু অনেকক্ষণ উদয়াদিত্য সম্বন্ধে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিতে সাহস করিলেন না। মহারাজও সে-বিষয়ে কোনো কথা উত্থাপিত করিলেন না । অবশেষে আর থাকিতে না পারিয়া মহিষী বলিয়া উঠিলেন, “মহারাজ, আমার এক ভিক্ষ রাখে, এবার উদয়কে মাপ করে। বাছাকে আরো ঘদি কষ্ট দাও তৰে আমি বিষ খাইয়া মরিব ।” প্রতাপাদিত্য ঈষৎ বিরক্তিভাবে কহিলেন, “আগে হইতে যে তুমি কাদিতে বলিলে ! আমি তো কিছুই করি নাই।” . . " পাছে প্রতাপাদিত্য আবার সহসা বাকিয়া দাড়ান এই নিমিত্ত মহিষী ও-কথা আর দ্বিতীয় বার উত্থাপিত করিতে সাহস করিলেন না । ভীত মনে ধীরে ধীরে চলিয়া আসিলেন। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন গেল, মহারাজের কোনো · প্রকার ভাবাস্তর লক্ষিত হইল না । তাছাই দেখিয়া মহিষী ও বিভা আশ্বস্ত। হুইলেন। মনে করিলেন, উদয়াদিত্য স্থানাস্তরে যাওয়ায় মহারাজ মনে মনে বুঝি সপ্তষ্ট হুইয়াছেন । । এখন কিছুদিনের জন্য মহিষী একপ্রকার নিশ্চিম্ভ হইতে পারিলেন। ইতিপূর্বেই মহিষী বিভাকে বলিয়াছেন ও বাড়িতে রাষ্ট্র করিয়া দিয়াছেন যে বিভাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাইতে অম্বুরোধ করিয়া রামচন্দ্র রায় এক পত্র লিখিয়াছেন। বিভার মনে আর আহলাদ ধরে না । রামমোহনকে বিদায় করিয়া অবধি বিভার মনে আর এক মুহূর্তের জন্ত শাস্তি ছিল না । যখনই সে অবসর পাইত তখনই ভাবিত এতনি কী মনে করিতেছেন ? তিনি কি আমার অবস্থা ঠিক বুঝিতে পারিয়াছেন ? হয়তে তিনি রাগ করিয়াছেন। র্তাহাকে বুঝাইয়া বলিলে তিনি আমাকে কি মাপ করিবেন না ? হা জগদীশ্বর, বুঝাইয়। বলিব কবে ? কবে আবার দেখা হইবে ? উলটিয়া পালটিয়া বিভা ক্রমাগত এই কথাই ভাবিত। দিবানিশি তাহার মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা চাপিয়া ছিল । মহিষীর কথা শুনিয়া বিভার কী অপরিসীম আনন্দ হইল, তাহার মন হইতে কী ভয়ানক একটা গুরুভার তৎক্ষণাৎ দূর হইবা গেল। লজ-শরম দূৰ করিয়া হাসিয়া কাদিয়া সে তাহার মায়ের বুকে মুখ লুকাইয়া কতক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তাহার মা কাদিতে লাগিলেন। বিভা যখন মনে করিল তাহার স্বামী তাহাকে ভুল বুঝেন নাই, তাহার মনের কথা ঠিক বুঝিয়াছেন– তখন তাহার চক্ষে সমস্ত জগৎ নম্বনকানন হুইয়া উঠিল। তাহার স্বামীর হৃদয়কে কী প্রশস্ত বলিয়াই মনে হইল ! তাহার স্বামীর ভালোবাসার উপর কতখানি বিশ্বাস, কতখানি আস্থা জন্মিল ! সে মনে করিল, তাহার স্বামীৱ