পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ ~ 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু এরূপ চোখ-বধা বিশ্বাসে বেশিদিন মনকে ভুলাইয়া রাখিতে পারিলেন না। র্তাহার দাদামহাশয়ের জন্য মনে কেমন একটা ভয় হইতে লাগিল। যশোহুরে ফিরিয়া যাইবার কথা দাদামহাশয়কে বলা বৃথা ; তিনি স্থির করিলেন— একদিন লুকাইয়া যশোহুরে পলাইয়। যাইব । আবার সেই কারাগার মনে পড়িল । কোথায় এই আনন্দের স্বাধীনতা আর কোথায় সেই সংকীর্ণ ক্ষুদ্র কারাগারের একঘেয়ে জীবন। কারাগারের সেই প্রতিমুহূর্তকে এক-এক বৎসর রূপে মনে পড়িতে লাগিল। সেই নিরালোক, নিজন, বায়ুইন, বদ্ধ ঘরটি কল্পনায় স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন, শরীর শিহরিয়া উঠিল । তবুও স্থির করিলেন, এখান হইতে একদিন সেই কারাগারের অভিমুখে পলাইতে হুইবে । আজই পলাইব— এমন কথা মনে করিতে পারিলেন না। একদিন পলাইব— মনে করিয়া অনেকট নিশ্চিন্ত হইলেন । " . আজ বৃহস্পতিবার, বারবেলা, আজ যাত্রা হইতে পারে না, কাল হইবে। আজ দিন বড়ে খারাপ। সকাল হইতে ক্রমাগত টপ টপ করিয়া বৃষ্টি হইতেছে । সমস্ত আকাশ লেপিয়া মেঘ করিয়া আছে । আজ সন্ধ্যাবেলায় রায়গড় ছাড়িয়া যাইতেই হুইবে বলিয়া উদয়াদিত্য স্থির করিয়া রাখিয়াছেন। সকালে যখন বসন্ত রায়ের সঙ্গে তাহার দেখা হইল, তখন বসন্ত রায় উদয়াদিত্যকে জড়াইয়া ধরিয়া কহিলেন, "দাদা, কাল রাত্রে আমি একটা বড়ো দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছি। স্বপ্নটা ভালো মনে পড়িতেছে না, কেবল মনে আছে, তোতে আমাতে যেন— যেন জন্মের মতে ছাড়াছাড়ি হইতেছে।” উদয়াদিত্য বসন্ত রায়ের হাত ধরিয়া কহিলেন, “না, দাদামহাশয় । ছাড়াছাড়ি যদি বা হয় তো জন্মের মতো কেন হইবে ?” বসন্ত রায় অন্যদিকে চাহিয়া ভাবনার ভাবে কহিলেন, “তা নয় তো আর কী। কতদিন আর বঁাচিব বল, বুড়া হইয়াছি।” । 劇 গত রাত্রের দুঃস্বপ্নের শেষ তান এখনো বসন্ত রায়ের মনের গুহার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হুইতেছিল, তাই তিনি অন্যমনস্ক হইয়া কী ভাবিতেছিলেন । 髓 * উদয়াদিত্য কিছু ক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন, "দাদামহাশয়, আবার যদি আমাদের ছাড়াছাড়ি হয় তো কী হইবে।” 齡 বসন্ত রায় উদয়াদিত্যের গলা ধরিয়া কহিলেন, “কেন ভাই, কেন ছাড়াছাড়ি হুইবে ? তুই আমাকে ছাড়িয়া যাস নে । এ বুড় বয়সে তুই আমাকে ফেলিয়া পালাস নে ভাই ।” .ف উদস্থাদিত্যের চোখে জল আসিল । তিনি বিস্মিত হইলেন, তাহার মনের