পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ونه ه কিরূপে কাটিৰে ? তাহার পর মনে পড়িল— বিভা। বিভা এখন কোথায় আছে ? এত কাল আমিই তাহার সুখের স্বৰ্ষ আড়াল করিয়া বসিয়া ছিলাম, এখন কি সে মুম্বী হইয়াছে ? বিভাকে মনে মনে কত আশীৰ্বাদ করিলেন । 鐵 মাঠের মধ্যে রোঁস্ত্রে রাখালদের বসিবার নিমিত্ত অশথ বট খেজুর সুপারি প্রভৃতির এক বন আছে– যুবরাজ তাহার মধ্যে গিয়া প্রবেশ করিলেন। তখন সন্ধ্যা হুইয়া আসিয়াছে। অন্ধকার করিয়াছে। যুবরাজের আজ পলাইবার কথা ছিল— সেই সংকল্প লইয়। তিনি মনে মনে আন্দোলন করিতেছিলেন । বসন্ত রায় যখন শুনিবেন উদয়াদিত্য পলাইয়া গেছেন, তখন তাহার কিরূপ অবস্থা হইবে, তখন তিনি হৃদয়ে আঘাত পাইয়া করুণ মুখে কেমন করিয়া বলিবেন, ‘অ্যা, দাদা আমার কাছ হইতে পলাইয়া গেল ? সে ছবি তিনি যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন। এমন সময়ে একজন রমণী কর্কশ কণ্ঠে বলিয়া উঠিল, “এই যে গা, এইখানে তোমাদের যুবরাজ– এইখানে !” দুইজন সৈন্ত মশাল হাতে করিয়া যুবরাজের কাছে আসিয়া দাড়াইল । দেখিতে দেখিতে আরো অনেকে আসিয়া তাহাকে বিরিয়া ফেলিল। তখন সেই রমণী তাহার কাছে আসিয়া কহিল, “আমাকে চিনিতে পার কি গা। একবার এইদিকে তাকাও ! একবার এইদিকে তাকাও !” যুবরাজ মশালের আলোকে দেখিলেন, রুক্মিণী । সৈন্তগণ রুক্মিণীর ব্যবহার দেখিয় তাহাকে ধমক দিয়া কহিল, “দূর হ মাগী ।” সে তাহাতে কর্ণপাতও না করিয়া কহিতে লাগিল, “এ-সব কে করিয়াছে ? আমি করিয়াছি। এ-সব কে করিয়াছে ? আমি করিয়াছি । এ-সব সৈন্যদের এখানে কে আনিয়াছে ? আমি আনিয়াছি । আমি তোমার লাগিয়া এত করিলাম, আর তুমি—” যুবরাজ ঘৃণায় রুক্মিণীর দিকে পশ্চাৎ ফিরিয়া দাড়াইলেন। সৈন্তগণ রুক্মিণীকে বলপূর্বক ধরিয়া তফাত করিয়া দিল। তখন মুক্তিয়ার খ সম্মুখে আসিয়া যুবরাজকে সেলাম করিয়া দাড়াইল । যুবরাজ বিন্মিত হইয়া কহিলেন, “মুক্তিয়ার খী, কী খবর ?” মুক্তিয়ার খ বিনীতভাবে কহিল, “জনাব, আমাদের মহারাজের নিকট হইতে আদেশ লইয়। আসিতেছি।” যুবরাজ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী আদেশ ।” মুক্তিয়ার খা প্রতাপাদিত্যের স্বাক্ষরিত আদেশপত্র বাহির করিয়া যুবরাজের হাতে দিল । ! o, যুবরাজ পড়িয়া কহিলেন, “ইহার জন্ত এত লৈষ্ঠের প্রয়োজন কী ? আমাকে একখানঃ পত্র লিখিয়া আদেশ করিলেই তো আমি যাইতাম । আমি তো আপনিই