পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ-ঠাকুরানীর হাট (t)ఏ রামমোহন থাকিতে পারিল না, কাছে জাসিয়া কহিল, “মহারাজ, আপনার মহিষী— যশোহরের রাজকুমারী।” i I k r সহসা রামচন্দ্র রায়ের প্রাণ যেন কেমন চমকিয় উঠিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ রমাই ভাড় হালিয়। রাজার দিকে কটাক্ষ করিয়। কঠোর কণ্ঠে কছিল, “কেন, এখন কি আর দাদাকে মনে ধরে না নাকি ?” : | রামচন্দ্র রায়ের হৃদয়ে করুণার আভাস জাগিয়া উঠিয়াছিল, তথাপি রমাইয়ের কথায় তিনি নিষ্ঠুর হাস্ত করিয়া উঠিলেন । তিনি ভাবিলেন, বিভাকে এখন মমতা দেখাইলে পাছে উপহাসাম্পদ হইতে হয় । বিভার মাথায় একেবারে সহস্ৰ বজ্রাঘাত হইল, সে লজ্জায় একেবারে মরিয়া গেল । চোখ বুজিয়া মনে মনে কহিল, মা গো, বসুন্ধরা, তুমি দ্বিধা হও । কাতর হইয়া চারিদিকে চাহিল, রামমোহনের মুখের দিকে একবার অসহায় দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিল । রামমোহন ছুটয়া আসিয়া সবলে রমাই ভাড়ের ঘাড় টিপিয়া ধরিয়া তাহাকে ঘর হইতে বাহির করিয়া দিল । রাজা ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, “রামমোহন, তুই আমার সম্মুখে বেয়াদবি করিস ” রামমোহন কঁাপিতে কঁাপিতে কহিল, “মহারাজ, আমি বেয়াদবি করিলাম ! তোমার মহিষীকে— আমার মা-ঠাকরুনকে বেটা অপমান করিল— উহার হইয়াছে কী, আমি উহার মাথা মুড়াইয়া ঘোল ঢালিয়া শহর হইতে বাহির করিয়া দিব, তবে আমার নাম রামমোহন ।” রাজা রামমোহনকে ধমক দিয়া কহিলেন, “কে আমার মহিষী ? আমি উহাকে চিনি না ।” বিভীর মুখ নীল হইয়া গেল, সে মুখে আঁচল চাপিয়া ধরিল, থর থর করিয়া তাহার সর্বাঙ্গ কঁাপিতে লাগিল, অবশেষে কঁাপিতে কঁাপিতে বিভা মুছিত হইয়া ভূমিতে পড়িল । তখন রামমোহন জোড়হন্তে রাজাকে কহিল, “মহারাজ, আজ চারপুরুষে তোমার বংশে আমরা চাকরি করিয়া আসিতেছি। বাল্যকাল হইতে তোমাকে পালন করিয়াছি । আজ তুমি আমার মা-ঠাকরুনকে অপমান করিলে, তোমার রাজ্যলক্ষ্মীকে দূর করিয়া দিলে, আজ আমিও তোমার চাকরি ছাড়িয়া দিয়া চলিলাম। আমার মা-ঠাকরুনের সেবা করিয়া জীবন কাটাইব । ভিক্ষা করিয়া খাইব, তবুও এ রাজবাটীর ছায়া মাড়াইব না।” বলিয়া রামমোহন রাজাকে প্রণাম করিল ও বিভাকে কহিল, “আয় মা, আয় । এখান হইতে শীঘ্ৰ চলিয়া আয় । আর একমুহূর্তও