পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার ভালো লাগবার যোগ্য কোথাও কিছুই নেই। সেটা যে চিত্তদৈন্তের লজ্জাকর লক্ষণ এবং অর্বাচীন মূঢ়তার শোচনীয় প্রমাণ, সেটা বোঝবার বয়স তখনো হয় নি । - সাহিত্যে সাবালক হওয়ার পর থেকেই ওই বইটার পরে আমার ধিক্কার জন্মেছিল । বুঝেছি, যে-দেশে গিয়েছিলুম সেখানকারই যে সম্মানহানি করা হয়েছে তা নয়, ওটাতে নিজেরই সম্মানহানি । বিস্তর লোকের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও বইটা প্রকাশ করি নি । কিন্তু আমি প্রকাশে বাধা দিলেই ওটা যে অপ্রকাশিত থাকবে এই কৌতুহলমুখর যুগে তা আশা করা যায় না । সেইজন্তে এ লেখার কোন কোন অংশকে লেখক স্বয়ং গ্রাহ এবং ত্যাজ্য বলে স্বীকার করেছে সেটা জানিয়ে রেখে দিলুম। যথাসময়ে ময়লার ঝুলি হাতে আবর্জন কুড়োবার লোক আসবে, বাজারে সেগুলো বিক্রি হবার আশঙ্কাও যথেষ্ট আছে। অনেক অপরাধের অনেক প্রায়শ্চিত্ত বাকি থাকে ইহলোকে, প্রেতলোকে সেগুলো সম্পূর্ণ হতে থাকে । * এ বইটাকে সাহিত্যের পংক্তিতে আমি বসাতে চাই, ইতিহাসের পংক্তিতে নয়। পাঠ্য জিনিসেরই মূল্য সাহিত্যে, অপাঠ্য জিনিসেরও মূল্য ইতিহাসে। ঐতিহাসিককে যদি সম্পূর্ণ বঞ্চিত করতে পারতুম তবে আমার পক্ষে সেটা পুণ্যকর্ম, সুতরাং মুক্তির পথ হত। নিজের কাব্য সম্বন্ধে এই ত্যাগের সাধনায় প্রবৃত্ত হতে বার বার সংকল্প করেছি। কিন্তু দুর্বল মন, সংঘবদ্ধ আপত্তির বিরুদ্ধে ব্ৰতপালন করতে পারি নি। বাছাই করবার ভার দিতে হল পরশুপাণি মহাকালের হাতে । কিন্তু মুদ্রাযন্ত্রের যুগে মহাকালেরও কর্তব্যে ক্রটি ঘটছে। বইগুলির বৈষয়ি স্বত্ব হারিয়েছি বলে আরো তুর্বল হতে হল আমাকে। ū য়ুরোপ প্রবাসীর পত্ৰশ্রেণী আগাগোড়া অরক্ষণীয়া নয়। এর স্বপক্ষে একটা কথা আছে সে হচ্ছে এর ভাষা । নিশ্চিত বলতে পারি নে কিন্তু আমার বিশ্বাস, বাংলা সাহিত্যে চলতি ভাষায় লেখা বই এই প্রথম । আজ এর বয়স হল প্রায় ষাট । সে-ক্ষেত্রেও আমি ইতিহাসের দোহাই দিয়ে কৈফিয়ত দাখিল করব না । আমার বিশ্বাস বাংলা চলতি ভাষার সহজ প্রকাশপটুতার প্রমাণ এই চিঠিগুলির মধ্যে আছে।