পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

z : | ; যুরোপ-প্রবাসীর পত্র ৫৩৫ ৷ জীবনের সঙ্গে একটা গভীর সম্বন্ধ বাধিয়ে দিয়ে বক্তৃতা শুরু করলেন– আমরা "মূখেতে. চাহিয়া থাকে ফ্যল ফ্যাল করিয়া” রইলেম । . আমাদের জাহাজে একটি আস্ত জনবুল ছিলেন। তার তালবৃক্ষের মতো শরীর, কাটার মতে গোফ, শজারুর কাটার মতো চুল, হাড়ির মতো মুখ, মাছের চোখের মতো ম্যাড়মেড়ে চোখ, তাকে দেখলেই আমার গা কেমন করত, আমি পাচ হাত । তফাতে সরে যেতেম। এক-এক জন কোনো অপরাধ না করলেও তার মুখস্ত্ৰ যেন সর্বদা । অপরাধ করতে থাকে। প্রত্যহ সকালে উঠেই শুনতে পেতেম তিনি ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, হিন্দুস্থানি প্রভৃতি যত ভাষা জানেন সমস্ত ভাষায় জাহাজের সমস্ত চাকরবাকরদের অজস্র গাল দিতে আরম্ভ করেছেন, ও দশ দিকে দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছেন । তাকে কখনো হাসতে দেখি নি ; কারে সঙ্গে কথা নেই বার্তা নেই, আপনার ক্যাবিনে গেী হয়ে বসে আছেন। কোনো কোনো দিন ডেক-এ বেড়াতে আসতেন, বেড়াতে বেড়াতে যার দিকে একবার কৃপাকটাক্ষে নেত্রপাত করতেন, তাকে যেন পিপড়াটির মতো মনে করতেন । প্রত্যহ খাবার সময় ঠিক আমার পাশেই B– বসতেন। তিনি একটি ইয়ুরাণীয়। কিন্তু তিনি ইংরেজের মতো শিস দিতে, পকেটে হাত দিয়ে পা ফাক করে দাড়াতে সম্পূর্ণরূপে শিখেছেন। তিনি আমাকে বড়োই অনুগ্রহের চোখে দেখতেন। একদিন এসে মহাগম্ভীর স্বরে বললেন, “ইয়ংম্যান, তুমি অক্সফোর্ড যাচ্ছ ? অক্সফোর্ড য়ুনিভার্সিটি বড়ো ভালো বিদ্যালয় ।” অামি একদিন ট্রেঞ্চ সাহেবের “Proverbs and their lessons” বইখানি পড়ছিলেম, তিনি এসে বইটি নিয়ে শিস দিতে দিতে দু-চার পাত উলটিয়ে পালটিয়ে বললেন, "হুঁ, ভালো বই বটে ।” এডেন থেকে স্থয়েজে যেতে দিন পাচেক লেগেছিল । যারা ব্রিদিসি-পথ দিয়ে ইংলণ্ডে র্যায় তাদের জাহাজ থেকে নেবে সুয়েজে রেলওয়ের গাড়িতে উঠে আলেকজান্দ্রিয়াতে যেতে হয় ; আলেকজান্দ্রিয়ার বন্দরে তাদের জন্যে একটা স্টীমার অপেক্ষা করে— সেই স্টীমারে চড়ে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইটালিতে পৌছতে হয়। আমরা overland ডাঙা-পেরোনো যাত্রী, সুতরাং আমাদের স্বয়েজে নাবতে হল । আমরা তিনজন বাঙালি ও একজন ইংরেজ একখানি আরব নৌকো ভাড়া করলেম । মাচুষের “divine” মুখশ্ৰী কতদূর পশুত্বের দিকে নাবতে পারে, তা সেই নৌকোর মাঝিটার। মুখ দেখলে জানতে পারতে। তার চোখ দুটাে যেন বাঘের মতে, কাল কুচকুচে রং, কপাল নিচু, ঠোট পুরু, সবস্থদ্ধ মুখের ভাব অতি ভয়ানক। অন্তান্ত নৌকোর সঙ্গে দরে বনল না, সে একটু কম দামে নিয়ে যেতে রাজি হল। ব— মহাশয় তো