পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (28み) চতুর্থ পত্র আমরা সেদিন হাউস অফ কমন্সে গিয়েছিলেম। পার্লামেন্টের অভ্ৰভেদী চুড়া, প্রকাগু বাড়ি, হা-করা ঘরগুলো দেখলে তাক লেগে যায়। একটা বড়ো ঘরে হাউস বসে, ঘরের চারি দিকে গোল গ্যালারি, তার এক দিকে দর্শকেরা আর-এক দিকে খবরের কাগজের রিপোর্টাররা । গ্যালারি অনেকটা থিয়েটারের ড্রেস-সার্কলের মতো । গ্যালারির নিচে স্টলে মেম্বাররা বসে। তাদের জন্যে দু-পাশে হন্ধ দশখানি বেঞ্চি । এক পাশের পাচখানি বেঞ্চিতে গবর্নমেণ্টের দল, আর-এক পাশের পাঁচখানিতে বিপক্ষ দল। স্বমুখের প্লাটফর্মের উপর একটা কেদারা আছে, সেইখানে প্রেসিডেন্টের মতো এক জন (যাকে স্পীকার বলে ) মাথায় পরচুলা পরে অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে বসে থাকেন। যদি কেউ কখনো কোনো অন্যায় ব্যবহার বা কোনো আইনবিরুদ্ধ কাজ করে তাহলে স্পীকার উঠে তাকে বাধা দেয়। যেখানে খবরের কাগজের রিপোর্টাররা সব বসে, তার পিছনে খড়খড়ি-দেওয়া একটা গ্যালারিতে মেয়েদের জায়গা, বাইরে থেকে তাদের দেখা যায় না। আমরা যখন গেলেম, তখন ও'ডোনেল বলে এক জন আইরিশ সভ্য ভারতবর্ষ সংক্রান্ত বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, প্রেসঅ্যাক্টের বিরুদ্ধে ও অন্যান্য নানা বিষয় নিয়ে তিনি আন্দোলন করছিলেন । তার প্রস্তাব অগ্রাহ হয়ে গেল। হাউসের ভাবগতিক দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেম । যখন এক জন কেউ বক্তৃত করছে, তখন হয়তো অনেক মেম্বার মিলে “ইয়া” “ইয়া” “ইয়া” ”ইয়া” করে চীৎকার করছে, হাসছে। আমাদের দেশে সভাস্থলে ইস্কুলের ছোকরারাও হয়তো এমন করে না। অনেক সময়ে বক্তৃতা হচ্ছে আর মেম্বাররা কপালের উপর টুপি টেনে দিয়ে অকাতরে নিদ্রা যাচ্ছেন। এক বার দেখলেম যে, ভারতবর্ষের বিষয় নিয়ে একটা বক্তৃতার সময় ঘরে নয়-দশ জনের বেশি মেম্বার ছিল না, অন্যান্য সবাই ঘরের বাইরে হাওয়া খেতে, বা সাপার খেতে গিয়েছেন ; আর যেই ভোট নেবার সময় হল অমনি সবাই চার দিক থেকে এসে উপস্থিত । বক্তৃতা শুনে বা কোনোপ্রকার যুক্তি শুনে যে কারো মত স্থির হয়, তা তো 6दोंथ ट्ठण न । গত বৃহস্পতিবারে হাউস অফ কমন্সে ভারতবর্ষ নিয়ে খুব বাদানুবাদ চলেছিল । সেদিন ব্রাইট সিভিল সার্ভিস সম্বন্ধে, গ্লাডস্টোন তুলা-জাতের শুষ্ক ও আফগান যুদ্ধ সম্বন্ধে, ভারতবর্ষীয়দের দরখাস্ত দাখিল করেন। চারটের সময় পালামেন্ট খোলে ।