পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুরোপ-প্রবাসীর পত্র . الاوهه অনেক উদ্যমের আবশ্বক করে । এখানে এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যেতে হলে গাড়ির চলন নেই, হাত-পা নাড়তে চাড়তে দশটা চাকরের উপর নির্ভর করলে চলে না । গাড়িভাড়া অত্যস্ত বেশি, আর চাকরের মাইনে মাসে সাড়ে তিন টাকা নয়। থিয়েটার দেখতে যাও ; সন্ধ্যেবেলা বৃষ্টি পড়ছে, পথে কাদা, একটা ছাতা ঘাড়ে করে মাইল কতক ছুটোছুটি করে তবে ঠিক সময়ে পৌছতে পারবে । যখন রক্তের তেজ থাকে তখন এ-সকল পেরে ওঠা যায় । # ষষ্ঠ পত্র আমাদের ব্রাইটনের বাড়িটি সমুদ্রের কাছে একটি নিরালা জায়গায়। এক সার কুড়ি-পঁচিশটি বাড়ি, বাড়িগুলির নাম মেডিন ভিলাজ । হঠাৎ মনে হয়েছিল বাগানবাড়ি । এখানে এসে দেখি, ভিলা’ত্বর মধ্যে আমাদের বাড়ির সামনে দু-চার হাত জমিতে দু-চারটে গাছ পোতা আছে । বাড়ির দরজায় একটা লোহার কড়া লাগানো, সেইটেতে ঠক ঠক করলেম, আমাদের ল্যাগুলেডি এসে দরজা খুলে দিলে । আমাদের দেশের তুলনায় এখানকার ঘরগুলো লম্বা চওড়া ও উচুতে ঢের ছোটো । চারিদিকে জানলা বন্ধ, একটু বাতাস আসবার জো নেই, কেবল জানলাগুলো সমস্ত কঁাচের বলে অালো আসে । শীতের পক্ষে এ-রকম ছোটোখাটো ঘরগুলো ভালো, একটু আগুন জাললেই সমস্ত বেশ গরম হয়ে ওঠে, কিন্তু তা হ’ক, যেদিন মেঘে চারদিক অন্ধকার, টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, তিনি-চার দিন ধরে মেঘ-বৃষ্টিঅন্ধকারের এক মুহূর্ত বিরাম নেই, সেদিন এই ছোটো অন্ধকার ঘরটার এক কোণে বসে আমার মনটা অত্যন্ত বিগড়ে যায়, কোনোমতে সময় কাটে না । খালি আমি বলে নয়, আমার ইংরেজ আলাপীরা বলেন সে-রকম দিনে তাদের অত্যন্ত ৪wear করার প্রবৃত্তি জন্মায় ( swear করা রোগটা সম্পূর্ণ যুরোপীয়, স্বতরাং ওর বাংলা কোনো নাম নেই), মনের ভাবটা অধাৰ্মিক হয়ে ওঠে । যা হ’ক এখানকার ঘরচুয়ারগুলি বেশ পরিষ্কার ; বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে কোথাও ধুলো দেখবার জো নেই, মেজের সর্বাঙ্গ কর্পেট প্রভৃতি দিয়ে মোড়া, সিড়িগুলি পরিষ্কার তক তক করছে । চোখে দেখতে খারাপ হলে এরা সইতে পারে না । প্রতি সামান্ত বিষয়ে এদের ভালো দেখতে হওয়াটা প্রধান আবশ্যক। শোকবস্ত্রও স্বত্র দেখতে হওয়া t ግ¢