পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

4१० ।। রবীন্দ্র-রচনাবলী । “কাল রাত্তিরে সংগীতশালায় মাডাম নীলসন গান করেছিলেন, it was exquisite ” যতগুলি মহিলা ভিজিটর বসেছিলেন সকলে ওই কথায় এক-একটা বিশেষণ যোগ করতে লাগলেন ; এক জন বললেন “charming,” এক জন বললেন “super o এক জন বললেন "something unearthly,” আর-এক জন বাকি ছিলেন, তিনি বললেন “Isn't it ?” আমার বোধ হয়, এ এক-রকম সকালবেল উঠে কথোপকথনের মুগুর ভাজা । যা হ’ক এই রকম মাঝে মাঝে ভিজিটর আনাগোনে করছে।. মুন্ডাজ লাইব্রেরিতে তিনি চাদ দিয়ে থাকেন। সেখান থেকে অনবরত ক্ষণজীবী নভেলগুলো তার ওখানে যাতায়াত করে। সেগুলো অনবরত গলাধঃকরণ করেন। তা ছাড়া আছে ভালোবাসার অভিনয় । মিষ্টি হাসি ও মিষ্টি কথার আদানপ্রদান, অলীক ছুতো নিয়ে একটু অলীক অভিমান, হয়তো পুরুষ-পক্ষ থেকে একটু রসিকতা, অপর পক্ষে উদ্যত ক্ষুদ্র মুষ্টি সহযোগে স্বমধুর লাঞ্ছন, “Oh you naughty, wicked, provoking man !” তাতে নটি ম্যান-এর পরিপূর্ণ তৃপ্তি । এই রকম ভিজিটর অভ্যর্থনা, ভিজিট প্রত্যুপণ, নতুন নভেল পড়া, নতুন ফ্যাশন স্বষ্টি ও নতুন ফ্যাশনের অনুবর্তন করা, এবং তার সঙ্গে মধুর রস যোগ করে ফ্লার্ট এবং হয়তো ‘লাভ করা তাদের দিনকৃত্য । আমাদের দেশে যেমন ছেলেবেলা থেকে মেয়েদের বিয়ের জন্তে প্রস্তুত করে, যথেষ্ট লেখাপড়া শেখায় না, কেননা মেয়েদের আপিসে যেতে হবে না ; এখানেও তেমনি মাগগি দরে বিকোবার জন্যে মেয়েদের ছেলেবেলা থেকে পালিশ করতে থাকে, বিয়ের জন্যে যতটুকু লেখাপড়া শেখা দরকার ততটুকু যথেষ্ট। একটু গান গাওয়া, একটু পিয়ানো বাজানো, ভালো করে নাচ, খানিকট ফরাসি ভাষা বিকৃত উচ্চারণ, একটু বোন ও সেলাই করা জানলে একটি মেয়েকে বিয়ের দোকানের জানলায় সাজিয়ে রাখবার উপযুক্ত রংচঙে পুতুল গড়ে তোলা যায়। এ-বিষয়ে একটা দিশি পুতুল ও একটা বিলিতি পুতুলের যতটুকু তফাত, আমাদের দেশের ও এদেশের মেয়েদের মধ্যে ততটুকু তফাত মাত্র। আমাদের দিশি মেয়েদের পিয়ানো ও অন্যান্য টুকিটাকি শেখবার দরকার করে না, বিলিতি মেয়েদেরও অল্পস্বল্প লেখাপড়া শিখতে হয় কিন্তু দুই-ই দোকানে বিক্রি হবার জন্তে তৈরি। এখানেও পুরুষেরাই হতাকর্তা, স্ত্রীরা তাদের অনুগত ; স্ত্রীকে আদেশ করা, স্ত্রীর মনে লাগাম লাগিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো চালিয়ে বেড়ানো স্বামীরা ঈশ্বরনির্দিষ্ট । অধিকার মনে করেন । ফ্যাশনী মেয়ে ছাড়া বিলেতে আরো অনেক রকম মেয়ে আছে, নইলে সংসার চলত না । মধ্যবিত্ত গৃহস্থ মেয়েদের অনেকটা মেহনত করতে হয়, বাবুয়ান করলে চলে না। সকালে উঠে একবার রান্নাঘর তদারক করতে