পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

4१२. রবীন্দ্র-রচনাবলী ও তাকে ই করে থাকতে হয় না । বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খুব সহজভাবে গল্পস্বল্প করতে পারেন, নিমন্ত্রণসভায় মুখ ভার করে বা লজ্জায় অবসন্ন হয়ে থাকেন না, পরিচিতদের সঙ্গে অন্যায় ঘেষাৰ্ঘেষি নেই, কিংবা তাদের কাছ থেকে নিতান্ত অসামাজিক ভাবে দুরেও থাকেন না । লোকসমাজে মুখটি খুব হাসিখুশি, প্রসন্ন ; যদিও নিজে খুব রসিক নন, কিন্তু হাসিতামাশা বেশ উপভোগ করতে পারেন, একটা কিছু ভালো লাগলে মন খুলে প্রশংসা করেন, একটা কিছু মজার কথা শুনলে প্রাণ খুলে হাস্ত করেন । আমি দিনকতক আমার শিক্ষকের পরিবারের মধ্যে বাস করেছিলুম। সে বড়ো অদ্ভূত পরিবার। মিস্টার ব— মধ্যবিত্ত লোক । তিনি লাটিন ও গ্রীক খুব ভালো রকম জানেন । র্তার ছেলেপিলে কেউ নেই ; তিনি, তার স্ত্রী, আমি, আর এক জন দাসী, এই চার জন মাত্র একটি বাড়িতে থাকতুম। কর্তা আধৰুড়ো লোক, অত্যন্ত অন্ধকার মুতি, দিনরাত খুতখুঁত শ্বিট খিট করেন, নিচের তলায় রান্নাঘরের পাশে একটি ছোটো জানলাওয়ালা দরজা-বদ্ধ অন্ধকার ঘরে থাকেন । একে তো স্বৰ্যকিরণ সে ঘরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে না, তাতে জানলার উপরে একটা পর্দা ফেলা, চারদিকে পুরোনো ছেড়া ধুলোমাথা নানাপ্রকার আকারের ভীষণদর্শন গ্ৰীক লাটিন বইয়ে দেয়াল ঢাকা, ঘরে প্রবেশ করলে এক রকম বদ্ধ হাওয়ায় হঁাপিয়ে উঠতে হয়। এই ঘরটা হচ্ছে র্তার স্টাডি, এইখানে তিনি পড়েন ও পড়ান। র্তার মুখ সর্বদাই বিরক্ত । আঁট বুটজুতো পরতে বিলম্ব হচ্ছে, বুটজুতোর উপর চটে ওঠেন ; যেতে যেতে দেয়ালের পেরেকে তার পকেট আটকে স্থায়, রেগে ভুরু কুঁকড়ে ঠোট নাড়তে থাকেন । তিনি যেমন খুতখুতে মানুষ, তার পক্ষে তেমনি খুতখুতের কারণ প্রতি পদে জোটে । আসতে যেতে ছাঁচট খান, অনেক টানাটানিতে র্তার দেরাজ খোলে না, যদি বা খোলে তবু যে-জিনিস খুজছিলেন তা পান না । এক-এক দিন সকালে র্তার স্টাডিতে এসে দেখি, তিনি অকারণে বসে বসে, ভ্ৰকুটি করে উষ্ঠা করছেন, ঘরে একটি লোক নেই। কিন্তু ব— আসলে ভালোমাহুৰ ; তিনি খুতখুতে বটে, রাগী নন, খিটখিট করেন কিন্তু ঝগড়া করেন না। নিদেন তিনি মানুষের উপর রাগ প্রকাশ করেন না, টাইনি বলে তার একটি কুকুর আছে তার উপরেই তার আক্রোশ। সে একটু নড়লে চড়লে তাকে ধমকাতে থাকেন, আর দিনরাত তাকে লাথিয়ে লাথিয়ে একাকার করেন। তাকে আমি প্রায় হাসতে দেখি নি। তার কাপড়চোপড় ছেড়া অপরিস্কার । মানুষটা এই রকম । তিনি এককালে পাদরি ছিলেন ; আমি নিশ্চয় বলতে পারি, প্রতি রবিবারে তার বক্তৃতায় তিনি শ্রোতাদের নরকের বিভীষিকা দেখাতেন । র্তার এত কাজের ভিড়, এত লোককে