পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

**s রবীন্দ্র-রচনাবলী f ংসার বেশ চলে যাচ্ছে । মিসেস রাধছেন বাড়ছেন কাজকর্ম করছেন, মিস্টার রোজগার করে টাকা এনে দিচ্ছেন ; দু-জনে কখনো প্রকৃত ঝগড়া হয় না, কেবল কখনো কখনো দুই-এক বার দুই একটা কথা-কাটাকাটি হয়, তা এত মৃদুস্বরে যে পাশের ঘরের লোকের কানে পর্যন্ত পৌছয় না । যা হ’ক আমি সেখানে দিনকতক । থেকে বিব্রত হয়ে সে অশান্তির মধ্যে থেকে চলে এসে বেঁচেছি । অষ্টম পত্র আমরা এখন লগুন ত্যাগ করে এসেছি । লগুনের জনসমুদ্রে জোয়ারভাটা খেলে তা জান ? বসন্তের আরম্ভ থেকে গরমির কিছুদিন পর্যন্ত লণ্ডনের জোয়ার-ঋতু। এই সময়ে লণ্ডন উংসবে পূর্ণ থাকে – থিয়েটার নাচগান, প্রকাশ্ব ও পারিবারিক “বল”, আমোদপ্রমোদে ঘেঁষাৰ্ঘেষি ঠেসাঠেসি। ধনী লোকদের বিলাসিনী মেয়ের রাতকে দিন করে তোলে। আজ তাদের নাচে নেমন্তয়, কাল ডিনারে, পরশু থিয়েটার, তরশু রাত্তিরে ম্যাডাম প্যাটির গান, দিনের চেয়ে রাত্তিরের ব্যস্ততা বেশি। সুকুমারী মহিলা, র্যাদের তিলমাত্র শ্রম লাঘবের জন্যে শত শত ভক্ত সেবকের দল দিনরাত্রি প্রাণপণ করছেন— চৌকিটা সরিয়ে দেওয়া, প্লেটটা এগিয়ে দেওয়া, দরজাটা খুলে দেওয়া, মাংসটা কেটে দেওয়া, পাখাটা কুড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি— তারা রাত্তিরের পর রাত্তির ন-টা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত গ্যাসের ও মামুষের নিশ্বাসে গরম ঘরের মধ্যে অবিশ্রাস্ত নৃত্যে ,রত ; সে আবার আমাদের দেশের অলস নড়েচড়ে বেড়ানো বাইনাচের মতো নয়, অনবরত ঘুরপাক। ললিতা রমণীরা কী করে টিকে থাকেন, । আমি তাই ভাবি । এই তো গেল আমোদপ্রমোদ, তা ছাড়া এই সময়ে পার্লামেণ্টের অধিবেশন। ব্যাণ্ডের একতান স্বর, নাচের পদশক, ডিনার-টেবিলের হাস্যালাপ্লধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্র একটা পোলিটিকাল উত্তেজন । স্থিতিশীল ও গতিশীল দলভুক্তরা প্রতি রাত্রের পার্লামেন্টের রাজনৈতিক মল্লযুদ্ধের বিবরণ কী আগ্রহের সঙ্গে আলোচনা করতে থাকে। সীজনের সময় লগুনে এই রকম আলোড়ন । তার পরে আবার ভাটা পড়তে আরম্ভ হয়, লগুনের কৃষ্ণপক্ষ আসে। তখন আমোদ-কোলাহল বন্ধ হয়ে যায়, বাকি থাকে অল্পস্বল্প লোক, যাদের শক্তি নেই, বা দরকার আছে, বা বাইরে যাবার ইচ্ছে নেই। সেই সময়ে লণ্ডন থেকে চলে যাওয়া একটা ফ্যাশন । আমি goi o (“Sketches and Travels in London”: Thackeray) পড়েছিলুম, এই সময়টাতে অনেকে ধারা নগরে থাকে তারা বাড়ির সম্মুখে দরজা