পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*** রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্রব্য দেখা যাচ্ছে ; কসাইয়ের দোকানে কোনোপ্রকার কাচের - আবরণ নেই, চতুস্পদের আস্ত আস্ত পা ঝুলছে—ভেড়া, গোরু, শুওর, বাছুরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নানাপ্রকার ভাবে চোখের সামনে টাঙিয়ে রাখা, হাস প্রভৃতি নানাপ্রকার মর পাখি লম্বা লম্বা গলাগুলো নিচের দিকে ঝুলিয়ে আছে, আর খুব একটা জোয়ান পেটমোটা ব্যক্তি হাতে একটা প্রকাগু ছুরি নিয়ে কোমরে একটা আঁচলা ঝুলিয়ে দরজার কাছে দাড়িয়ে । বিলেতের ভেড়াগোরুগুলো তাদের মোটাসোটা মাংসচবিও’আলা শরীরের ও স্বস্বাদের জন্যে বিখ্যাত, যদি কোনো মানুষ-খেগো সভ্যজাত থাকত, তা হলে বোধ হয় বিলেতের কসাইগুলো তাদের হাটে অত্যন্ত মাগগি দামে বিকোত । একজন মেমসাহেব বলেন যে, কসাইয়ের দোকান দেখলে তার অত্যন্ত তৃপ্তি হয় ; মনে আশ্বাস হয়, দেশে আহারের অপ্রতুল নেই, দেশের পেট ভরবার মতো খাবার প্রচুর আছে, দুর্ভিক্ষের কোনো সম্ভাবনা নেই । ইংরেজদের খাবার টেবিলে যে রকম আকারে মাংস এনে দেওয়া হয়, সেটা আমার কাছে দুঃখজনক । কেটে-কুটে মসলা দিয়ে মাংস তৈরি করে আনলে একরকম ভুলে যাওয়া যায় যে একটা সত্যিকার জন্তু খেতে বসেছি ; কিন্তু মুখ-পা বিশিষ্ট আস্ত প্রাণীকে অবিকৃত আকারে টেবিলে এনে দিলে একটা মৃতদেহ খেতে বসেছি বলে গা কেমন করতে থাকে । নাপিতের দোকানের জানলায় নানাপ্রকার কাঠের মাথায় নানাপ্রকার কোকড়ানো পরচুলো বসানো রয়েছে, দাড়িগোফ ঝুলছে, মার্কামারা শিশিতে টাকনাশক চুল-উঠে-যাওয়া-নিবারক অব্যর্থ ওষুধ রয়েছে ; দীর্ঘকেশী মহিলারা এই দোকানে গেলে সেবকের ( সেবিকা নয় ) তাদের মাথা ধুয়ে দেবে, চুল বেঁধে দেবে, ' চুল কুঁকড়ে দেবে। এখানে মদের দোকানগুলোই সব-চেয়ে জমকালে, সন্ধ্যের সময় সেগুলো আলোয় আকীর্ণ হয়ে যায়, বাড়িগুলো প্রায় প্রকাও হয়, ভিতরটা খুব বড়ো ও সাজানো, খন্দেরের বাক দোকানের বাইরে ও ভিতরে সর্বদাই, বিশেষত সন্ধ্যেবেলায় লেগে থাকে। দরজির দোকানও মন্দ নয় । নানা ফ্যাশনের সাজসজ্জা কাচের জানলার ভিতর থেকে দেখা যাচ্ছে, বড়ো বড়ো কাঠের মূর্তিকে কাপড় পরিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ; মেয়েদের কাপড়চোপড় এক দিকে ঝোলানো ; এইখানে কত লুব্ধ নেত্ৰ দিনরাত্রি তাকিয়ে আছে তার সংখ্যা নেই, এখানকার বিলাসিনীরা, যাদের নতুন ফ্যাশনের দামি কাপড় কেনবার টাকা নেই, তারা দোকানে এসে কাপড়গুলো ভালো করে দেখে যায়, তার পরে বাড়িতে গিয়ে সস্তায় নিজের হাতে তৈরি করে।