পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুরোপ-প্রবাসীর পত্র ¢ ግቖ পীগড়ে বেড়াতে বাই । গোরু চরছে, ভেড়া চরছে ; এক-এক জায়গায় রাস্তা এত ঢালু ধে, উঠতে-নাবতে কষ্ট হয় । এক-এক জায়গায় খুব সংকীর্ণ পথ, ছ ধারে গাছ উঠেছে আঁধার করে, ওঠবার সুবিধের জন্তে ভাঙা ভাঙা সিড়ির মতন আছে, পথের মধ্যেই লতা গুল্ম উঠেছে । চারদিকে মধুর রোদ র। এখানকার বাতাস বেশ গরম, ভারতবর্ষ মনে পড়ে। এইটুকু গরমেই লওনের প্রাণীদের চেয়ে এখানকার জীবজন্তুদের কত নিজীব ভাব প্রত্যক্ষ করা যায় । ঘোড়াগুলো আস্তে আস্তে যাচ্ছে, মানুষগুলোর তেমন ভারি ব্যস্ত ভাব নেই, গড়িমসি করে চলেছে । , - এখানকার সমুদ্রের ধার আমার বড়ো ভালো লাগে। যখন জোয়ার আসে, তখন সমুদ্রতীরের খুব প্রকাও পাথরগুলো জলে ডুবে যায়, তাদের মাথা বেরিয়ে থাকে। ছোটো ছোটো দ্বীপের মতো দেখায়। জলের ধারেই ছোটো বড়ো কত পাহাড় । ঢেউ লেগে লেগে পাহাড়ের নিচে গুহা তৈরি হয়ে গেছে ; যখন ভাট পড়ে যায়, তখন আমরা এক-এক দিন এই গুহার মধ্যে গিয়ে বসে থাকি । গুহার মধ্যে জায়গায় জায়গায় অতি পরিষ্কার একটু জল জমে রয়েছে, ইতস্তত সমুদ্র-শৈবাল জমে আছে, সমুদ্রের একটা স্বাস্থ্যজনক গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, চারদিকে পাথর ছড়ানো । আমরা সবাই মিলে এক-এক দিন সেই পাথরগুলো ঠেলাঠেলি করে নাড়াবার চেষ্টা করি, নানা শামুক ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে আসি। এক একটা পাহাড় সমুদ্রের জলের উপর খুব ঝুকে পড়েছে ; আমরা প্রাণপণ করে এক এক দিন সেই অতি দুর্গম পাহাড়গুলোর উপর উঠে বসে নিচে সমুদ্রের ঢেউয়ের ওঠাপড়া দেখি । হু হু শব্দ উঠেছে, ছোটো ছোটো নৌকো পাল তুলে চলে বাচ্ছে, চারদিকে রোদুর, মাথার উপর ছাতা খোলা, পাথরের উপর মাথা দিয়ে আমরা শুয়ে শুয়ে গল্প করছি । আলস্তে কাল কাটাবার এমন জায়গা আর কোথায় পাব ? এক-এক দিন পাহাড়ে যাই, আর পাথর-দিয়ে-ঘেরা ঝোপেঝাপে-ঢাকা একটি প্রচ্ছন্ন জায়গা দেখলে সেই খাদটিতে গিয়ে বই নিয়ে পড়তে বসি । '* . দশম পত্র ক্রিসমাস ফুরোল, আবার দেখতে দেখতে আর-একটা উৎসব এসে পড়ল । আজ নূতন বর্ষের প্রথম দিন। কিন্তু তার জন্যে কিছুই গোলমাল দেখতে পাচ্ছি নে । নূতন বৎসর যে এখানে এমন নিঃশৰ পদসঞ্চারে আসবে তা জানতেম না। শুনেছি ফ্রান্সে লোকে নতুন বৎসরকে খুব সমাদরের সঙ্গে আবাহন করে। কাল ।