রবীন্দ্র-রচনাবলী به بbه পুরাতন বৎসরের শেষ রাত্রে আমাদের প্রতিবেশীরা বাড়ির জানলা খুলে রেখেছিল। পাছে পুরোনো বৎসর ঘরের মধ্যে আটকা পড়ে থাকে, পাছে নতুন বৎসর এসে জানলার কাছে বৃথা ঘুরে ঘুরে বেড়ায় । * টকি থেকে বহুদিন হল আমরা আবার লগুনে এসেছি। এখন আমি ক—র পরিবারের মধ্যে বাস করি । তিনি, তার স্ত্রী, তাদের চার মেয়ে, দুই ছেলে, . তিন দাসী, আমি ও টেবি বলে এক কুকুর নিয়ে এই বাড়ির জনসংখ্যা । মিস্টার ক— একজন ডাক্তার। তার মাথার চুল ও দাড়ি প্রায় সমস্ত পাকা । বেশ বলিষ্ঠ ও মুত্র দেখতে । অমায়িক স্বভাব, অমায়িক মুখশ্ৰী। মিসেস ক— আমাকে আস্তরিক ষত্ব করেন । শীতের সময় আমি বিশেষ গরম কাপড় না পরলে তার কাছে ভৎসনা খাই । খাবার সময় যদি তার মনে হয়, আমি কম করে খেয়েছি, তা হলে যতক্ষণ না তার মনের মতো খাই, ততক্ষণ পীড়াপীড়িকরেন । বিলেতে লোকে কাশিকে ভয় করে ; যদি দৈবাৎ আমি দিনের মধ্যে দু-বার কেশেছি তা হলেই তিনি জোর করে আমার স্বান বন্ধ করান, আমাকে দশ রকম ওষুধ গেলান, শুতে যাবার আগে আমার পায়ে খানিকটা গরম জল ঢালবার বন্দোবস্ত করেন, তবে ছাড়েন। বাড়ির মধ্যে সকলের আগে বড়ো মিস ক— ওঠেন । তিনি নিচে এসে ব্রেকফাস্ট তৈরি হয়েছে কি না তদারক করেন ; অগ্নিকুণ্ডে দু-চার হাত কয়লা দিয়ে ঘরটি বেশ উজ্জল করে রাখেন। খানিক বাদে সিড়িতে একটা দুন্দাড় পায়ের শব্দ শুনতে পাওয়া যায় । বুড়ো ক— শীতে হি হি করতে করতে খাবার ঘরে এসে উপস্থিত । তাড়াতাড়ি আগুনে হাত-পা পিঠ-বুক তাতিয়ে । খবরের কাগজ হাতে খাবার টেবিলে এসে বসেন। তার বড়ো মেয়েকে চুম্বন করেন, আমার সঙ্গে স্থপ্রভাত অভিবাদন হয়। লোকটা প্রফুল্ল । আমার সঙ্গে খানিকট হাসিতামাশা হয়, খবরের কাগজ থেকে এটা-ওটা পড়ে শোনান , তার এক পেয়াল কফি শেষ হয়ে গেছে, এমন সময়ে তার আর দুটি মেয়ে এসে তাকে চুম্বন করলেন । তাদের সঙ্গে তার বন্দোবস্ত ছিল যে, তারা যেদিন মিস্টার ক—র আগে উঠবেন, সেদিন মিস্টার ক— তাদের পাচ সিকে পুরস্কার দিবেন, আর যেদিন মিস্টার ক— তাদের আগে উঠবেন, সেদিন তাদের চার আনা দণ্ড দিতে হবে। যদিও এত অল্প দিতে হত, তবু তাদের কাছে প্রায় দু-তিন পাউও পাওনা হয়েছে। রোজ সকালে পাওনাদার পাওনার দাবি করেন। কিন্তু দেনদাররা হেসেই উড়িয়ে দেন । ক— বলেন, “এ ভারি অন্যায়।” আমাকে মাঝে মাঝে মধ্যস্থ মেনে বলেন, “আচ্ছা মিস্টার টি— তুমিই বলে, এ-রকম ডেট অফ অনর ফাকি দেওয়া কি ভদ্রতা ?” যা হোক ।
