পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ۰ هاه বিশেষণ প্রয়োগ করলেন যা গুরুমশায়ের সান্নিধ্য পরিত্যাগের পর থেকে আর কখনো শোনা হয় নি । সমস্ত রজনীর দুঃখের পর প্রভাতের এই অপমানটাও নিরুত্তরে সহ করলুম। অবশেষে তিনি দয়াপরবশ হয়ে আমার ক্যাবিনের তৃত্যটিকে ডেকে দিলেন। তাকেও আবার একে একে সমস্ত ঘটনাটি খুলে বলতে হল। প্রথমে সে কিছুই বুঝতে পারলে না, মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তার জীবনের অভিজ্ঞতায় নিঃসন্দেহ এ-রকম ঘটনা এই প্রথম। অবশেষে ধীরে ধীরে সে সমুদ্রের দিকে এক বার মুখ ফেরালে এবং ঈষৎ হাসলে , তার পর চলে গেল । i সী-সিক্নেস ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগল। সে-ব্যাধিটার যন্ত্রণা অনভিজ্ঞ স্থলচরদের কিছুতে বোঝানো যেতে পারে না। নাড়িতে ভারতবর্ষের অন্ন তিলমাত্র অবশিষ্ট রইল না। যুরোপে প্রবেশ করবার পূর্বে সমুদ্র এই দেহ হতে ভারতবর্ধটাকে ষেন বাকিয়ে বাকিয়ে একেবারে সাফ করে ফেলবার চেষ্টা করছে। ক্যাবিনে চার দিন পড়ে আছি । ২৬ আগস্ট । শনিবার থেকে আর আজ এই মঙ্গলবার পর্যন্ত কেটে গেল। জগতে ঘটনা বড়ো কম হয় নি— স্বৰ্ষ চার বার উঠেছে এবং তিন বার অস্ত গেছে, বৃহৎ পৃথিবীর অসংখ্য জীব দস্তধাবন থেকে দেশ উদ্ধার পর্যন্ত বিচিত্র কর্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনটে দিন মহা ব্যস্তভাবে অতিবাহিত করেছে— জীবনসংগ্রাম, প্রাকৃতিক নির্বাচন, আত্মরক্ষা, বংশরক্ষা প্রভৃতি জীবরাজ্যের বড়ো বড়ো ব্যাপার সবেগে চলছিল— কেবল আমি শয্যাগত জীবন্মত হয়ে পড়ে ছিলুম। আধুনিক কবিরা কখনো মুহূর্তকে অনন্ত কখনো অনস্তকে মুহূর্ত আখ্যা দিয়ে প্রচলিত ভাষাকে নানাপ্রকার বিপরীত ব্যায়াম-বিপাকে প্রবৃত্ত করান। আমি আমার এই চারটে দিনকে বড়ো রকমের একটা মুহূর্ত বলব, না এর প্রত্যেক মুহূর্তকে একটী যুগ বলব স্থির করতে পারছি নে । 飄 • ‘ যাই হ’ক কষ্টের সীমা নেই। মানুষের মতো এতবড়ো একটা উন্নত জীব যে সহসা এতটা উৎকট দুঃখ ভোগ করে তার একটা মহৎ নৈতিক কিংবা আধ্যাত্মিক কারণ থাকাই উচিত ছিল ; কিন্তু জলের উপরে কেবল খানিকট ঢেউ ওঠার नक्रन জীবাত্মার এত বেশি পীড়া নিতান্ত অন্যায় অসংগত এবং অগৌরবজনক বলে বোধ হয় । কিন্তু জাগতিক নিয়মের প্রতি দোষারোপ করে কোনো সুখ নেই, কারণ সে নিন্দাবাদে কারো গায়ে, কিছু ব্যথা বাজে না, এবং জগৎ-রচনার তিলমাত্র সংশোধন হয় না । 禹 যন্ত্রণাশয্যায় অচেতনপ্রায় ভাবে পড়ে আছি । কখনো কখনো ভেকের উপর