পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি ¢Uዓ লোকের একটি দীর্ঘ আরক্ত ইঙ্গিত এসে স্পর্শ করেছে, অন্ত সবগুলো আসন্ন ঝটিকার ছায়ায় আচ্ছন্ন । কিন্তু ঝড় এল না । একটু প্রবল বাতাস এবং সবেগ বৃষ্টির উপর দিয়েই সমস্ত কেটে গেল। ভূমধ্যসাগরে আকাশের অবস্থা অত্যন্ত অনিশ্চিত । শুনলুম, আমরা যে পথ দিয়ে যাচ্ছি এখান দিয়ে জাহাজ সচরাচর যায় না। জায়গাট নাকি ভারি ঝোড়ো । Ја k রাত্রে ডিনারের পর যাত্রীরা কাপ্তেনের স্বাস্থ্যপান এবং গুণগান করলে। কাল ব্রিদিসি পৌছব। জিনিসপত্র বাধতে হবে । ৭ সেপ্টেম্বর। আজ সকালে ব্রিন্দিসি পৌছনো গেল । মেলগাড়ি প্রস্তুত ছিল, আমরা গাড়িতে উঠলুম। গাড়ি যখন ছাড়ল তখন টিপটিপ করে বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে । আহার করে এসে একটি কোণে জানলার কাছে বসা গেল । প্রথমে, দুই ধারে কেবল আঙুরের থেত । তার পরে জলপাইয়ের বাগান। জলপাইয়ের গাছগুলো নিতাস্ত বাকাচোরা, গ্রন্থি ও ফাটলবিশিষ্ট, বলি-অঙ্কিত, বেঁটেখাটো রকমের ; পাতাগুলো উর্ধ্বমুখ ; প্রকৃতির হাতের কাজে যেমন একটি সহজ অনায়াসের ভাব দেখা যায়, এই গাছগুলোয় তার বিপরীত । এরা নিতান্ত লক্ষ্মীছাড়া, কায়ক্লেশে অষ্টাবক্র হয়ে দাড়িয়ে আছে ; এক-একটা এমন বেঁকে ঝুকে পড়েছে যে পাথর উচু করে তাদের ঠেকো দিয়ে রাখতে হয়েছে। * বামে চষা মাঠ ; সাদা সাদা ভাঙা ভাঙা পাথরের টুকরো চষা মাটির মধ্যে মধ্যে উংক্ষিপ্ত । দক্ষিণে সমুদ্র । সমুদ্রের একেবারে ধারেই এক-একটি ছোটো ছোটো শহর দেখা দিচ্ছে । চার্চচুড়া-মুকুটিত সাদা ধবধবে নগরীটি একটি পরিপাটি তম্বী নাগরীর মতো কোলের কাছে সমুদ্র-দৰ্পণ রেখে নিজের মুখ দেখে হাসছে । নগর পেরিয়ে আবার মাঠ । ভুট্টার খেত, আঙুরের থেত, ফলের খেত, জলপাইয়ের বন ; খেতগুলি খও প্রভরের বেড়া দেওয়া। মাঝে মাঝে এক-একটি বাধা কুপ। দূরে দূরে দুটো-একটা সঙ্গিহীন ছোটাে সাদা বাড়ি। স্বর্যাস্তের সময় হয়ে এল। আমি কোলের উপর এক থোলো আঙর নিয়ে বসে বসে এক-আধটা করে মুখে দিচ্ছি। এমন মিষ্ট টসটসে সুগন্ধ আঙর ইতিপূর্বে কখনো থাই নি । মাথায় রঙিন রুমাল বাধা ওই ইতালীয়া যুবতীকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, ইতালিয়ানীরা এখানকার আঙুরের গুচ্ছের মতে, অমনি একটি বৃস্তুভরা অজস্র স্বভোল সৌন্দর্য, যৌবনরসে অমনি উৎপূর্ণ- এবং ওই আঙুরেরই মতো তাদের মুখের রং - অতি বেশি সাদা নয়। *