পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি । అవ পৃথিবীর অপরিচিত নিভৃত নদীকলধ্বনিত ছায়াস্থগু বাংলা দেশ, আমার সেই অকৰ্মণ্য গৃহপ্রিয় বাল্যকাল, কল্পনাবিষ্ট যৌবন, নিশ্চেষ্ট নিরুদ্যম চিস্তাপ্রিয় জীবনের স্বতি এই স্বকিরণে, এই তপ্ত বায়ুহিল্লোলে হুদুর মৰীচিকার মতো আমার দৃষ্টির সম্মুখে জেগে উঠেছে। ידי ডেকের উপরে গল্পের বই পড়ছিলুম। মাঝে একবার উঠে দেখলুম, দু-ধারে ধূসরবর্ণ বালুকাতীর— জলের ধারে ধারে একটু একটু বনবাউ এবং অৰ্ধশুস্ক তৃণ উঠেছে। আমাদের ডান দিকের বালুকারাশির মধ্যে দিয়ে একদল আরব শ্রেণীবদ্ধ উট বোঝাই করে নিয়ে চলেছে। প্রখর স্বর্যালোক এবং ধূসর মরুভূমির মধ্যে তাদের নীল কাপড় এবং সাদা পাগড়ি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেউ বা এক জায়গায় বালুকাগহ্বরের ছায়ায় পা ছড়িয়ে অলসভাবে শুয়ে আছে, কেউ বা নমাজ পড়ছে, কেউ বা নাসারজ্জ ধরে অনিচ্ছুক উটকে টানাটানি করছে। সমস্তটা মিলে খররৌদ্র আরব মরুভূমির এক খণ্ড ছবির মতো মনে হল। - * ২৪ অক্টোবর । আমাদের জাহাজের মিসেস —কে দেখে একটা নাট্যশালার ভগ্নাবশেষ বলে মনে হয় । সেখানে অভিনয়ও বন্ধ, বাসের পক্ষেও সুবিধা নয় । রমণীটি খুব তীক্ষুধার— যৌবনকালে নিঃসন্দেহ সেই তীক্ষতা ছিল উজ্জল । যদিও এখনো এর নাকে মুখে কথা, এবং অচিরজাত বিড়ালশাবকের মতো ক্রীড়াচাতুর্য, তবু কোনো যুবক এর সঙ্গে দুটাে কথা বলবার ছুতো অন্বেষণ করে না, নাচের সময় আহবান করে না, আহারের সময়ে সযত্বে পরিবেশন করে না । তার চঞ্চলতার মধ্যে শ্ৰী নেই, প্রৌঢ়তার সঙ্গে রমণীর মুখে যে একটি স্নেহময় স্বপ্রসন্ন স্বগম্ভীর মাতৃভাব পরিস্ফুট হয়ে ওঠে তাও তার কিছুমাত্র দেখি নে । 聊 ২৫ অক্টোবর। আজ সকালবেলা স্নানের ঘর বন্ধ দেখে দরজার সামনে অপেক্ষা করে দ্বাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ বাদে বিরলকেশ পৃথুকলেবর দ্বিতীয় ব্যক্তি তোয়ালে এবং স্পঞ্জ হস্তে উপস্থিত। ঘর থালাস হবামাত্র সেই জন-বুল অমানবদনে প্রথমাগত আমুকে অতিক্রম করে ঘরে প্রবেশ করলে। প্রথমেই মনে হল তাকে ঠেলে ঠুলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ি, কিন্তু শারীরিক দ্বন্দ্বটা অত্যন্ত হীন এবং রূঢ় বলে মনে হয়, বেশ স্বাভাবিকরূপে আসে না । সুতরাং অধিকার ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে দাড়িয়ে ভাবলুম, নম্রতা গুণটা খুব ভালো হতে পারে কিন্তু খ্ৰীষ্টজন্মের উনবিংশ শতাব্দী পরেও এই পৃথিবীর পক্ষে অনুপযোগী এবং দেখতে অনেকটা ভীরুতার মতো। এ-ক্ষেত্রে । নাবার ঘরে প্রবেশ করতে যতটা জেদের ততটা সংগ্রামের দরকার ছিল না। কিন্তু প্রাতঃকালেই একটা মাসবহুল কপিশবর্ণ পিজলচক্ষু রূঢ় ব্যক্তির সঙ্গে সংঘর্ষ-সম্ভাবনাটা