পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুই সখাতে ভেসে চলে যৌবনসাগরের জলে, কোথাও যেন নাহি রে তার অন্ত । আকাশ বলে ‘এসো এসো”, কানন বলে “ বোসো বোসো’, সবাই যেন নাম ধরে তার ডাকে । হেসে যখন কয় সে কথা মূৰ্ছা যায় রে বনের লতা, লুটিয়ে ভূয়ে চুপ করে সে থাকে । বনের হরিণ কাছে আসে— সাথে সাথে ফিরে পাশে, স্তব্ধ হয়ে দাড়ায় দেহছায় । পায়ের কাছে পড়ে লুটি, বড়ো বড়ো নয়ন দুটি তুলে তুলে মুখের পানে চায় । আপনা-ভোলা সরল হাসি ঝরে পড়েছে রাশি রাশি, আপনি যেন জানতে নাহি পায় । লতা তারে আটকে রেখে তারি কাছে হাসতে শেখে, হাসি যেন কুসুম হয়ে যায় । গান গায় সে সাঝের বেলা, মেঘগুলি তাই ভুলে খেলা নেমে আসতে চায় রে ধর্যাপানে, একে একে সাঝের তারা গান শুনে তার অবাক-পারা আর সবারে ডেকে ডেকে আনে । আপনি মাতে আপনি স্বরে, আর সবারে পাগল করে, সাথে সাথে সবাই গাহে গানজগতের যা কিছু আছে সব ফেলে দেয় পায়ের কাছে, প্ৰাণের কাছে খুলে দেয় সে প্ৰাণ । তোরাই শুধু শুনলি নে রে, কোথায় বসে রাইলি যে রে, দ্বারের কাছে গেল গেয়ে গেয়ে, কেউ তাহারে দেখলি নে তো চেয়ে । গাইতে গাইতে চলে গেল, কত দূর সে চলে গেল, গানগুলি তার হারিয়ে গেল বনে, দুয়ার দেওয়া তোদের পাষাণ মনে । মাতাল বুঝি রে, চাদের কিরণ পান করে ওর ঢুলু ঢুলু দুটি আঁখি, কাছে ওর যেয়ে না, কথাটি শুধায়ো না, ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে বসে আছে একাকী । ঘুমের মতো মেয়েগুলি বেড়ায় শুধু নুপুর রনরনি ।