পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ\Ο Ο রবীন্দ্র-রচনাবলী হাতে হাতে ধরি। ধরি নাচে যত সহচরী, চমকি ছুটিয়া যায় চপলা, মায়ার মেয়ে । যেন মোর কাছ দিয়ে এই তারা গেল চলে কেহ বা মাথায় মোর, কেহ বা আমার কোলে । কেহ বা মারিছে উকি হৃদয়-মাঝিারে পশি, আঁখির পাতার পরে কেহ বা দুলিছে বসি । মাথার উপর দিয়া কেহ বা উড়িয়া যায়, নয়নের-পানে মোর কেহ বা ফিরিয়া চায় । এখনি শুনিব যেন অতি মৃদু পদধ্বনি, ছোটাে ছোটাে নুপুরের অতিমৃদু রনরনি । রয়েছি। চকিত হয়ে আঁখির নিমেষ ভুলি— এখনি দেখিব যেন স্বপ্নমুখী ছায়াগুলি । অয়ি স্বপ্নমোহময়ী, দেখা দাও একবার । কোথা দিয়ে আসিতেছ, কোথা দিয়ে চলিতেছ, কোথা গিয়ে পশিতেছ। বড়ো সাধ দেখিবার | আঁধার পরানে পশি সারা রাত করি খেলা কোনখানে কোন দেশে পালাও সকালবেলা ! অরুণের মুখ দেখে কেন এত হয় লাজসারা দিন কোথা বসে না জানি কী কর কাজ । ঘুম-ঘুম আঁখি মেলি তোমরা স্বপনীবালা, নন্দনের ছায়ে বসি শুধু বুঝি গাথ মালা । শুধু বুঝি গুন গুন গুন গুন গান কর, আপনার গান শুনে আপনি ঘুমায়ে পড় । আজি এই রজনীতে অচেতন চারি ধারএই আবরণ ঘোর ভেদ করি মন মোর স্বপনের রাজ্যমাঝে দাড়া দেখি একবার । নিদ্রার সাগরজলে মহা-আঁধারের তলে চারিদিকে প্রসারিত এ কী এ নূতন দেশএকত্রে স্বরগ-মর্ত, নাহিকো দিকের শেষ । কী যে যায় কী যে আসে চারি দিকে আশেপাশে— কেহ কঁদে কেহ হাসে, কেহ থাকে কেহ যায় ! অবিশ্রাম লুকাচুরি— আঁখি না। সন্ধান পায় । কত ভয় কত শোক, কত কী যে কোলাহল— কত পশু কত পাখি, কত মানুষের দল । উপরেতে চেয়ে দেখাে কী প্রশান্ত বিভােবরী— নিশ্বাস পড়ে না, যেন জগৎ রয়েছে মারি ।