পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কড়ি ও কোমল S C (c. প্ৰাণের যে কথাগুলি আমি নাহি জানি সে-কথা কেমন করে জেনেছে সবাই । গাহিতে পারি। নে তাহা আমি শুধু হায় { পত্ৰ নৌকাযাত্রা হইতে ফিরিয়া আসিয়া লিখিত সুহৃদ্ধর শ্ৰীযুক্ত প্রিয়নাথ সেন স্থলচরবরেষ জলে বাসা বেঁধেছিলেম, ডাঙায় বড়ো কিচিমিচি | সবাই গলা জাহির করে, চেচায় কেবল মিছিমিছি । সস্তা লেখক কোকিয়ে মরে, ঢাকা নিয়ে সে খালি পিটোয়, ভদ্রলোকের গায়ে পড়ে কলম নেড়ে কালি ছিটোয় । এখানে যে বাস করা দায় ভিনভনানির বাজারে, প্ৰাণের মধ্যে গুলিয়ে উঠে ইট গোলের মাঝারে । কানে যখন তালা ধরে, উঠি যখন ইপিয়ে কোথায় পালাই, কোথায় পালাই— জলে পড়ি ঝাপিয়ে । গঙ্গাপ্ৰাপ্তির আশা করে গঙ্গাযাত্ৰা করেছিলেম । তোমাদের না বলে কয়ে আস্তে আস্তে সরেছিলেম । দুনিয়ার এ মজলিসেতে এসেছিলেম গান শুনতে, আপন মনে গুনগুনিয়ে রাগ-রাগিণীর জাল বুনতে । গান শোনে সে কাহার সাধ্যি, ছোড়াগুলো বাজায় বান্দ্যি, বিদ্যোখানা ফাটিয়ে ফেলে থাকে তারা তুলে ধুনতে । ডেকে বলে, হেঁকে বলে, ভঙ্গি করে বেঁকে বলে— “আমার কথা শোনো সবাই গান শোনো আর নাই শোনো | গান যে কাকে বলে সেইটে বুঝিয়ে দেব, তাই শোনো ।” টীকে করেন, ব্যাখ্যা করেন, জেকে ওঠে ব্যক্তিমে— কে দেখে তার হাত-পা নাড়া, চক্ষু দুটাের রক্তিমে ! চন্দ্ৰসূর্য জ্বলছে মিছে আকাশখানার চালাতে— তিনি বলেন, “আমিই আছি। জুলতে এবং জ্বালাতে ।” কুঞ্জবনের তানপুরোতে সুর বেঁধেছে বসন্ত, সেটা শুনে নাড়েন কৰ্ণ, হয় নাকে তার পছন্দ । তারি সুরে গাক-না সবাই টপ্পা খেয়াল ধুরবোধ— গায় না যে কেউ, আসল কথা নাইকো কারো সুর-বোধ ! কাগজওয়ালা সারি সারি নাড়ছে কাগজ হাতে নিয়ে— বাঙলা থেকে শান্তি বিদায় তিনশো। কুলোর বাতাস দিয়ে ।