পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ O \υ রবীন্দ্র-রচনাবলী কাগজ দিয়ে নৌকা বানায় বেকার যত ছেলেপিলে, কৰ্ণ ধরে পার করবেন দু-এক পয়সা খেয়া দিলে । সস্তা শুনে ছুটে আসে যত দীর্ঘকর্ণগুলো— বঙ্গদেশের চতুর্দিকে তাই উড়েছে এত ধুলো । খুদে খুদে ‘আর্যগুলো ঘাসের মতো গজিয়ে ওঠে, ছচোলো সব জিবের ডগা কাটার মতে পায়ে ফোটে । তারা বলেন “আমিই কল্কি”— গাজার কল্কি হবে বুঝি ! অবতারে ভরে গেল যত রাজ্যের গলিযুঁজি । পাড়ায় এমন কত আছে কত কব তার ! বঙ্গদেশে মেলাই এল বরা”-অবতার | র্দাতের জোরে হিন্দুশাস্ত্ৰ তুলবে তারা পাকের থেকে, দাঁতকপাটি লাগে তাদের দাঁত-খিচুনির ভঙ্গি দেখে । আগাগোড়াই মিথ্যে কথা, মিথ্যেবাদীর কোলাহল, জিব নাচিয়ে বেড়ায় যত জিহ্রাওয়ালা সঙের দল বাক্যবিন্যা ফেনিয়ে আসে, ভাসিয়ে নে যায় তোড়ে— কোনোক্রমে রক্ষে পেলেম মা-গঙ্গারই ক্রোডে । সাগর-পানে বহন করে গিরিরাজের গান । ধীরি ধীরি বাতাসটি দেয় জলের গায়ে কাটা । আকাশেতে আলো-আঁধার খেলে জোয়ারভাটা । তীরে তীরে গাছের সারি পল্লবেরই ঢেউ । সারাদিবস হেলে দোলে, দেখে না তো কেউ { পূর্বতীরে তরুশিরে অরুণ হেসে চায়— পশ্চিমেতে কুঞ্জমাঝে সন্ধা নেমে যায় । তীরে ওঠে শঙ্খধ্বনি, ধীরে আসে কানে, সন্ধ্যতার চেয়ে থাকে ধরণীর পানে । ঝাউবনের আড়ালেতে চাদ ওঠে। ধীরে, ফোটে সন্ধ্যাদীপগুলি অন্ধকার তীরে । হট্টগোলটা ভুলেছিলেম, সুখে ছিলেম খুব । আপন মনে সাতরে বেড়াই— ভাসি যে দিনরাত । রোদ পোহাতে ডাঙায় উঠি, হাওয়াটি খাই চোখ বুজে, ভয়ে ভয়ে কাছে এগোই তেমন তেমন লোক বুঝে । গতিক মন্দ দেখলে আবার ডুবি অগাধ জলে, এমনি করেই দিনটা কাটাই লুকোচুরির ছলে । তুমি কেন ছিপ ফেলেছি শুকনো ডাঙায় বসে ? বুকের কাছে বিদ্ধ করে টান মেরেছ কাষে ।