পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミOと রবীন্দ্র-রচনাবলী সপ্ত ঋষি দাড়াইল আসি নন্দনের সুরতরুমূলে— চেয়ে থাকে। পশ্চিমের পথে, ভুলে যায় আশীর্বাদ করা । নিশীথিনী রহিল জাগিয়া বদন ঢাকিয়া এলোচুলে । কেহ আর কহিল না কথা, একটিও বহিল না। শ্বাসআপনার সমাধি-মাঝারে নিরাশা নীরবে করে বাস । রাত্ৰি জগতেরে জড়াইয়া শত পাকে যামিনীনাগিনী আকাশ-পাতাল জুড়ি ছিল পড়ে নিদ্রায় মগনা, আপনার হিম দেহে আপনি বিলীনা একাকিনী । মিটিমিটি তারকায় জ্বলে তার অন্ধকার ফণা | উষা আসি মন্ত্র পড়ি বাজাইল ললিত রাগিণী । রাঙা আঁখি পাকালিয়া সাপিনী উঠিল। তাই জাগিএকে একে খুলে পাক, আঁকিবাকি কোথা যায় ভাগি । সেথায় ঘুমাবে বলে ডুবিতেছে বাসুকিভগিনী মাথায় বহিয়া তার শত লক্ষ রতনের কণা | শিয়রেতে সারাদিন জেগে রবে বিপুল সাগরনিভৃতে স্তিমিত দীপে চুপি চুপি কহিয়া কাহিনী মিলি কত নাগবালা স্বপ্নমালা করিবে রচনা | বৈতরণী অশ্রুস্রোতে স্ফীত হয়ে বহে বৈতরণী, চৌদিকে চাপিয়া আছে আঁধার রজনী । পূর্ব তীর হতে হুহু আসিছে নিশ্বাস, যাত্রী লয়ে পশ্চিমোতে চলেছে তরণী । মাঝে মাঝে দেখা দেয় বিদ্যুৎ-বিকাশ, কেহ করে নাহি চেনে বসে নতশিরে । গলে ছিল বিদায়ের অশ্রুকণা-হার, ছিন্ন হয়ে একে একে ক’রে পড়ে নীরে । ওই বুঝি দেখা যায় ছায়া-পরিপার, অন্ধকারে মিটিমিটি তারা-দীপ জ্বলে । হােথায় কি বিস্মরণ, নিঃস্বপ্ন নিদ্রার শয়ন রচিয়া দিবে ঝরা ফুলদলে ! অথবা অকুলে শুধু অনন্ত রজনী ভেসে চলে কর্ণধারবিহীন তরণী !