পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀOԵr রবীন্দ্র-রচনাবলী তারি মাঝখানে শুধু একটুকু জুই একটুকু হাসিমাখা সৌরভের লেশ, একটু অধর তার ছুই কি না-জুই, আপন আনন্দ লয়ে উঠিতেছে ফুটে আপন আনন্দ লয়ে পড়িতেছে টুটে । সমগ্ৰ অনন্ত ওই নিমেষের মাঝে একটি বনের প্রান্তে জুই হয়ে উঠে । পলকের মাঝখানে অনন্ত বিরাজে । যেমনি পলক টুটে ফুল ঝরে যায়, অনন্ত আপনা-মাঝে আপনি মিলায় । সমুদ্র কিসের অশান্তি এই মহাপারাবারে, সতত ছিড়িতে চাহে কিসের বন্ধন ! অব্যক্ত অস্ফুট বাণী ব্যক্ত করিবারে শিশুর মতন সিন্ধু করিছে ক্ৰন্দন । যুগযুগান্তর ধরি যোজন যোজন ফুলিয়া ফুলিয়া উঠে। উত্তাল উচ্ছাস— অশান্ত বিপুল প্ৰাণ করিছে গর্জন, নীরবে শুনিছে তাই প্ৰশান্ত আকাশ । আছাড়ি চুণিতে চাহে সমগ্র হৃদয় কঠিন পাষাণময় ধরণীর তীরে, জোয়ারে সাধিতে চায় আপন প্ৰলয়, ভাটায় মিলাতে চায় আপনার নীরে । অন্ধ প্ৰকৃতির হৃদে মৃত্তিকায় বাধা । সতত দুলিছে ওই অশ্রুর পাথর, উন্মুখী বাসনা পায় পদে পদে বাধা, কঁদিয়া ভাসাতে চাহে জগৎ-সংসার । সাগরের কণ্ঠ হতে কেড়ে নিয়ে কথা সাধ যায় ব্যক্ত করি মানবভাষায়— শান্ত করে দিই ওই চির-ব্যাকুলতা, সমুদ্রবায়ুর ওই চির হায়-হায় । সাধ যায় মোর গীতে দিবস-রজনী ধ্বনিবে পৃথিবী-ঘেরা সংগীতের ধ্বনি ।