পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানসী মরণস্বপ্ন কৃষ্ণপক্ষ প্রতিপদ | প্ৰথম সন্ধ্যায় স্নান চাদ দেখা দিল গগনের কোণে । ক্ষুদ্র নীেকা থরথরে চলিয়াছে পালভারে কালস্রোতে যথা ভেসে যায় অলস ভাবনাখানি আধোজাগা মনে । এক পারে ভাঙা তীর ফেলিয়াছে ছায়া, অন্য পারে ঢালু তট শুভ্র বালুকায় মিশে যায় চন্দ্রালোকে— ভেদ নাহি পড়ে চোখে— বৈশাখের গঙ্গা কৃশকায়া তীরতলে ধীরগতি অলস লীলায় । স্বদেশ পুরব হতে বায়ু বহে আসে দূর স্বজনের যেন বিরহের শ্বাস । জাগ্ৰত আঁখির আগে কখনো বা চাদ জাগে কখনো বা প্ৰিয়মুখ ভাসেআধেক উলস প্ৰাণ আন্ধেক উদাস । ঘনচ্ছায়া আম্রকুঞ্জ উত্তরের তীরে— যেন তারা সত্য নহে, স্মৃতি-উপবন । তীর, তরু, গৃহ, পথ, জ্যোৎস্নাপটে চিত্ৰবৎ— দূর মায়াজগতের ছায়ার মতন । স্বপ্নাকুল আঁখি মুদি ভাবিতেছি মনে— রাজহংস ভেসে যায় অপার আকাশে দীর্ঘ শুভ্ৰ পাখা খুলি চন্দ্রালোক-পানে তুলি, পৃষ্ঠে আমি কোমল শয়নে ; সুখের মরণসম ঘুমঘোর আসে । যেন রে প্রহর নাই, নাইক প্রহরী, এ যেন রে দিবাহারা অনন্ত নিশীথ । নিখিল নির্জন স্তব্ধ, শুধু শুনি জলশব্দ কলকল-কল্লোল-লহরীনিদ্রাপারাবার যেন স্বপ্নচঞ্চলিত । কত যুগ চলে যায় নাহি পাই দিশা— বিশ্ব নিবু-নিবু, যেন দীপ তৈলহীন । ミ○○