পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানসী। \©8ዒ এসো তুমি স্নান হেসে দিবাদগ্ধ আয়ুশেষে মরণের আশ্বাসের মতো । আমি শুধু চেয়ে থাকি । অশ্রুহীন-শ্রান্ত-আঁখি, পড়ে থাকি পৃথিবীর পরে— খুলে দাও কেশভার, ঘনমিন্ধ অন্ধকার মোরে ঢেকে দিক স্তরে স্তরে । রাখো এ কপালে মম। নিদ্রার আবেশ-সম হিমস্নিগ্ধ করতলখানি । বাক্যহীন স্নেহভরে অবশ দেহের পরে অঞ্চলের প্রান্ত দাও টানি । তার পরে পলে স্থাপলে করুণার অশ্রািজলে ভরে যাক নয়নপল্লব । সেই স্তব্ধ আকুলতা গভীর বিদায়ব্যথা কায়মনে করি অনুভব । রেড সী। ৭। কার্তিক ১৮৯০ শেষ উপহার আমি রাত্রি, তুমি ফুল। যতক্ষণ ছিলে কুঁড়ি জাগিয়া চাহিয়া ছিনু আঁধার আকাশ জুড়ি সমস্ত নক্ষত্র নিয়ে, তোমারে লুকায়ে বুকে । যখন ফুটিলে তুমি সুন্দর-তরুণ-মুখে, তখনি প্ৰভাত এল, ফুরালো আমার কাল ; আলোকে ভাঙিয়া গেল। রজনীর অন্তরাল । এখন বিশ্বের তুমি ; গুনগুন মধুকর চারিদিকে তুলিয়াছে বিস্ময়ব্যাকুল স্বর ; গাহে পাখি, বহে বায়ু ; প্রমোদহিল্লোলধারা নব্বস্ফুট জীবনেরে করিতেছে দিশাহারা। এত আলো, এত সুখ, এত গান, এত প্ৰাণ ছিল না। আমার কাছে— আমি করেছিনু দান শুধু নিদ্রা, শুধু শান্তি, সযতন নীরবতা, শুধু চেয়ে-থাকা আঁখি, শুধু মনে মনে কথা । আর কি দিইনি কিছু ? প্রলুব্ধ প্ৰভাত যবে চাহিল তোমার পানে, শত পাখি শত রবে: ডাকিল তোমার নাম, তখন পড়িল ঝরে একটি শিশিরকণা। চলে গেনু পরিপার ।