পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSO রবীন্দ্র-রচনাবলী পাখি যাবে উড়ে যায় আকাশের পানে মনে করে ‘এনুবুঝি পৃথিবী ত্যজিয়া”, যত ওড়ে- যত ওড়ে- যত উর্ধের্ব যায়— কিছুতে পৃথিবী তবু পারে না ছাড়িতে, অবশেষে শ্রান্তদেহে নীড়ে ফিরে আসে । চারি দিকে চাহিয়া আজি এ জগৎ হেরি কী আনন্দময় ! সবাই আমারে যেন দেখিতে আসিছে । নদী তরুলতা পাখি হাসিছে প্ৰভাতে । হাসিমুখে চলিয়াছে আপনার কাজে । ওই ধান কাটে, ওই করিছে কর্ষণ, ওই গাভী নিয়ে মাঠে চলেছে গাহিয়া । ওই-যে পূজার তরে তুলিতেছে ফুল, ওই নীেকা লয়ে যাত্রী করিতেছে পার । কেহ বা করিছে স্নান, কেহ তুলে জল, ছেলেরা ধুলায় বসে খেলা করিতেছে, সখারা দাড়ায়ে পথে কহে কত কথা । আহা সে অনাথ বালা কোথায় না জানি ! কে তারে আশ্রয় দেবে, কে তারে দেখিবে ! ব্যথিত হৃদয় নিয়ে কার কাছে যাবে, কে তারে পিতার মতো বুকে নিয়ে তুলে নয়নের অশ্রুজল দিবে মুছইয়া ! কী করেছি, কী বলেছি, সব গেছি। ভুলে, বিস্মৃত দুঃস্বপ্ন শুধু চেপে আছে প্ৰাণে— একখানি মুখ শুধু মনে পড়িতেছে, দুটি আঁখি চেয়ে আছে করুণ বিস্ময়ে । আহা, কাছে যাই তার— বুকে নিয়ে তারে শুধাই গে কী হয়েছে, কী করেছি। আমি ! একটি কুটিরে মোরা রহিব দুজনে, রামায়ণ হতে তারে শুনাব কাহিনীসন্ধ্যার প্রদীপ জেলে, শাস্ত্ৰকথা শুনে, বালিকা কোলেতে মোর পড়িবে ঘুমায়ে ।