পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা ও রানী 8 (o যত উপসৰ্গ ছিল অন্নবস্ত্ৰ আদি সব গেছে, আছে শুধু অস্থি আর চর্ম । সুমিত্ৰা । শিলাদিত্য ? দেবদত্ত | তার দৃষ্টি বাণিজ্যের প্রতি । বণিকের ধনভার করিয়া লাঘব নিজস্কন্ধে করেন বহন । সুমিত্ৰা । যুধাজিৎ ? দেবদত্ত | নিতান্তই ভদ্রলোক, অতি মিষ্টভাষী । থাকেন বিজয়কোটে, মুখে লেগে আছে “বাপু বাছা”, আড়চক্ষে চাহেন চৌদিকে, আদরে বুলানি হাত ধরণীর পিঠে— যাহা-কিছু হাতে ঠেকে যত্নে লন তুলি । সুমিত্ৰা । এ কী লাজ ! এ কী পাপ ! আমার আত্মীয় ! পিতৃকুল-অপযশ ! ছি:৷ ছি, এ কলঙ্ক করিব মোচন | তিলেক বিলম্ব নহে। পঞ্চম দৃশ্য দেবদত্তের গৃহ দেবদত্তের প্রবেশ দেবদত্ত । প্ৰিয়ে, বলি। ঘরে কিছু আছে কি ? নারায়ণী । তোমার থাকার মধ্যে আছি। আমি । তাও না থাকলেই আপদ চোকে । দেবদত্ত । ও আবার কী কথা ! নারায়ণী । তুমি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে যত রাজ্যের ভিক্ষুক জুটিয়ে আন, ঘরে খুদকুঁড়ো আর বাকি রইল না । খেটে খেটে আমার শরীরও আর থাকে না । দেবদত্ত । আমি সাধে আনি ? হাতে কাজ থাকলে তুমি থাক ভালো, সুতরাং আমিও ভালো থাকি । আর কিছু না হােক, তোমার ঐ মুখখানি বন্ধ থাকে । নারায়ণী । বটে ? তা আমি এই চুপ করলুম। আমার কথা যে তোমার অসহ্য হয়ে উঠেছে তা কে জানত ! তা, কে বলে আমার কথা শুনতে— দেবদত্ত | তুমিই বল, আবার কে বলবে ? এক কথা না শুনলে দশ কথা শুনিয়ে দাও । নারায়ণী । বটে ! আমি দশ কথা শোনাই ? তা, আমি এই চুপ করলুম। আমি একেবারে থামলেই তুমি বাচ । এখন কি আর সেদিন আছে— সেদিন গেছে। এখন আবার নতুন মুখের নতুন কথা ঔণতে সাধ গিয়েছে— এখন আমার কথা পুরোনো হয়ে গেছে। দেবদত্ত । বাপ রে ! আবার নতুন মুখের নতুন কথা ! শুনলে আতঙ্ক হয় । তবু পুরোনো কথাগুলো অনেকটা অভ্যোস হয়ে এসেছে। নারায়ণী । আচ্ছা বেশ । এতই জ্বালাতন হয়ে থাক তো আমি এই চুপ করলুম। আমি আর একটি **াও কব না। আগে বললেই হত— আমি তো জানতুম না। জানলে কে তোমাকে