পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Գ Հ সুমিত্ৰা । তোমরা কে গো ? পুরুষ । মিহিরগুপ্ত আমাদের ছেলেটিকে ধরে রেখে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী হায় মা, নারীর প্রাণ এত কি কঠিন ! দক্ষযজ্ঞে তুই যবে গিয়েছিলি সতী, প্রতিপদে আপন হৃদয়খনি তোর আপন চরণ দুটি জড়ায়ে কাতরে বলে নি কি ফিরে যেতে পতিগৃহ-পানে । সেই কৈলাসের পথে আর ফিরিল না। ও রাঙা চরণ । মা গো, সে দিনের কথা দেখ মনে করে । জননী, এসেছি আমি রমণীহৃদয় বলি দিতে, রমণীর ভালোবাসা ছিন্নশতদলসম দিতে পদতলে । নারী তুমি, নারীর হৃদয় জান তুমি, বল দাও জননী আমারে । থেকে থেকে ওই শুনি রাজগৃহ হতে “ফিরে এসো, ফিরে এসো রানী’- প্ৰেমপূৰ্ণ পুরাতন সেই কণ্ঠস্বর । খড়গ নিয়ে তুমি এসো, দাড়াও রুধিয়া পথ, বলো, “তুমি যাও, রাজধর্ম উঠক জাগিয়াধন্য হােক রাজা, প্ৰজা হােক সুখী, রাজ্যে ফিরে আসুক কল্যাণ— দূর হােক যত অত্যাচার— ভূপতির যশোরশ্মি হতে ঘুচে যাক কলঙ্ককালিমা । তুমি নারী ধরাপ্ৰান্তে যেথা স্থান পাও, একাকিনী বসে বসে নিজ দুঃখে মরো বুক ফেটে ।” পিতৃসত্যপালনের তরে রামচন্দ্ৰ গিয়াছেন বনে, পতিসত্যপালনের লাগি আমি যাব । যে সত্যে আছেন বাধা মহারাজ রাজ্যলক্ষ্মী-কাছে, কভু তাহা সামান্য নারীর তীরে ব্যর্থ হইবে না । বাহিরে একজন পুরুষ ও স্ত্রীর প্রবেশ অনুচর । কে তোরা ? দাড়া এইখানে । পুরুষ। কেন বাবা ? এখেনেও কি স্থান নেই ? স্ত্রী । মা গো ! এখেনেও সেই সিপাই ! সুমিত্রার বাহিরে আগমন আমাদের চাল নেই, চুলো নেই, মরবার জায়গািটুকু নেই- তাই আমরা মন্দিরে এসেছি। মার কাছে হত্যা দিয়ে পড়ব, দেখি তিনি আমাদের কী গতি করেন । শ্ৰী । তা, ই গা, এখেনেও তোমরা সিপাই রেখেছ ? রাজার দরজা বন্ধ, আবার মায়ের দরজাও আগলে দাড়িয়েছ ?