পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やがど)の রবীন্দ্র-রচনাবলী দাড়াইয়াছে যে, পিসা তাহার অনরারি পিসা-বৃত্তি পরিত্যাগ করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া যাইতে মানস করিতেছেন । আজ টাকার বিশেষ আবশ্যক হইয়াছে, সীতারাম রুক্মিণীর বাড়িতে আসিয়াছে। হাসিয়া কাছে ঘেষিয়া কহিল “ভিক্ষা যদি দিবে রাই, আমার সোনা-রুপায় কাজ নাই, আমি প্ৰাণের দায়ে এসেছি হে, মানরতন ভিক্ষা চাই । না ভাই, ছড়াটা ঠিক খাটিল না । মানরতনে আমার আপাতত তেমন আবশ্যক নাই, যদি আবশ্যক হয় পরে দেখা যাইবে, আপাতত কিঞ্চিৎ সোনা-রুপা পাইলে কাজে লাগে ।” রুক্সিণী সহসা বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করিয়া কহিল, “তা, তোমার যদি আবশ্যক হইয়া থাকে তো তোমাকে দিব না তো কাহাকে দিব ?” সীতারাম তাড়াতাড়ি কহিল, “নাঃ- আবশ্যক এমনই কী । তবে কী জন ভাই, আমার মার কাছে টাকা থাকে, আমি নিজের হাতে টাকা রাখি না । আজ সকালে মা জোড়াঘাটায় তার জামাইয়ের বাড়ি গিয়াছেন। টাকা বাহির করিয়া দিতে ভুলিয়া গেছেন। তা আমি কালই শোধ করিয়া দিব।" মঙ্গলা মনে মনে হাসিয়া কহিল, “তোমার অত তাড়াতাড়ি করিবার আবশ্যক কী ? যখন সুবিধা হয় শোধ দিলেই হইবে । তোমার হাতে দিতেছি, এ তো আর জলে ফেলিয়া দিতেছি না ।” জলে ফেলিয়া দিলেও বরঞ্চ পাইবার সম্ভাবনা আছে, সীতারামের হাতে দিলে সে সম্ভাবনাটুকুও নাই, এই প্ৰভেদ | মঙ্গলার এইরূপ অনুরাগের লক্ষণ দেখিয়া সীতারামের ভালোবাসা একেবারে উথলিয়া উঠিল। সীতারাম রসিকতা করিবার উদ্যোগ করিল । বিনা টাকায় নবাবি করা ও বিনা হাস্যরসে রসিকতা করা সীতারামের স্বভাবসিদ্ধ। সে যাহা মুখে আসে তাঁহাই বলে ও আর কাহারও অপেক্ষা না করিয়া নিজেই হাসিতে থাকে। তাহার হাসি দেখিয়া হাসি পায়। সে যখন রাজবাড়ির প্রহরী ছিল, তখন অন্যান্য প্রহরীদের সহিত সীতারামের প্রায় মাঝে মাঝে দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিবার উদ্যোগ হইত, তাহার প্রধান কারণ, সীতারাম যাহাকে মজা মনে করিত আর-সকলে তাহাকে মজা মনে করিত না । হনুমানপ্ৰসাদ তেওয়ারি পাহারা দিতে দিতে ঢুলিতেছিল, সীতারাম আস্তে আস্তে তাহার পশ্চাতে গিয়া হঠাৎ পিঠে এমন এক কিল মারিল যে, সেই হাড়ভাঙা রসিকতার জ্বালায় তাহার পিঠ ও পিত্ত একসঙ্গে জ্বলিয়া উঠিল। সীতারাম উচ্চৈঃস্বরে হাসিতে লাগিল, কিন্তু হনুমানপ্ৰসাদ সে হাসিতে যোগ না দিয়া কিলের সহিত হাস্যরসের প্রভেদ ও করুণ রসের সম্বন্ধ উদাহরণ দ্বারা সীতারামকে অতিশয় স্পষ্ট করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছিল। সীতারামের রসিকতার এমন আরো শত শত গল্প এইখানে উদধূত করা যাইতে পারে । পূর্বেই বলা হইয়াছে সীতারামের অনুরাগ সহসা উথলিয়া উঠিল, সে রুক্মিণীর কাছে ঘেষিয়া প্রীতিভরে কহিল, “তুমি আমার সুভদ্রা, আমি তোমার জগন্নাথ !” রুক্সিণী কহিল, “মর মিনসে । সুভদ্রা যে জগন্নাথের বোন ।” সীতারাম কহিল, “তাহা কেমন করিয়া হইবে ? তাহা হইলে সুভদ্ৰাহরণ হইল কী করিয়া ।” রুক্সিণী হাসিতে লাগিল, সীতারাম বুক ফুলাইয়া কহিল, “না, তা হইবে না, হাসিলে হইবে না, জবাব দাও । সুভদ্র। যদি বোনই হইল। তবে সুভদ্ৰাহরণ হইল কী করিয়া ।” সীতারামের বিশ্বাস যে, সে এমন প্রবল যুক্তি প্রয়োগ করিয়াছে যে ইহার উপরে আর কথা কহিবার था (ख्व़ों नारे । রুক্মিণী অতি মিষ্টস্বরে কহিল, “দূর মুখ ।”